বিনোদন ডেস্ক
বইমেলায় গিয়ে দর্শনার্থীদের রোষানলে পড়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত দম্পতি খন্দকার মুশতাক আহমেদ ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এমন ঘটনা ঘটে। যার একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়।
যেখানে দেখা যায়, একদল ক্রেতা-দর্শনার্থী তাদের তাড়া করেন। তাদের উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দেন। পরে মেলা প্রাঙ্গণে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ দম্পতিকে নিরাপদে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করেন।
ভাইরাল হওয়ার ভিডিওটি নজরে এসেছে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদেরও। আর বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। আজ শনিবার এই অভিনেত্রী মুশতাক-তিশা দম্পতিকে দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে মুশতাক-তিশার ‘অসম বিয়ে’র সঙ্গে নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এবং অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওনের বিয়ের প্রসঙ্গও টেনে আনা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টের শুরুতে মৌসুমী হামিদ লিখেছেন, বইমেলা থেকে মুশতাক-তিশা দম্পতিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অসভ্য দর্শনার্থীরা এই কাজটা খারাপ করেছে। সেইসঙ্গে মেলার নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
অসম বয়সী দম্পতি মুশতাক-তিশাই প্রথম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অসম বয়সী’ লেখক দম্পতি হিসেবে মুশতাক-তিশা বইমেলার প্রথম জুটি নয়। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ-মেহের আফরোজ শাওন ওই রেকর্ড অনেক আগে করে রেখেছেন। তিশা-মুশতাকের বয়সের গ্যাপ সম্ভবত ৪০। হুমায়ুন-শাওনের ২৫/৩০ হয়ে থাকতে পারে। ‘অসম বয়স’ বিষয়টা গোলমেলে। বয়সের গ্যাপ ঠিক কত হলে তাকে অসম বয়স বলা যেতে পারে আমার জানা নেই। পার্থক্য যদি কিছু থেকে থাকে; পাবলিকের ভাষ্যমতে, তা হচ্ছে হুমায়ূন ছিলেন শাওনের বাবার বয়সী। জনাব মুশতাক গ্র্যান্ডপা স্থানীয়। কিন্তু কথা সেটা নয়। হুমায়ুন-শাওনকে কখনও তিশা-মুশতাকের মতো হয়রানির শিকার হয়ে মেলা থেকে বেরিয়ে যেতে হয়নি। হুমায়ূন লেখক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় হওয়ায় এবং তখন ফেসবুক-টিকটক না থাকায় হয়তো বেঁচে গেছেন।
মৌসুমী হামিদ তার পোস্টে আরও লিখেছেন, মুশতাক-তিশা বর্তমানে যথেষ্ট আলোচনায় আছেন। তারা ইতিমধ্যে হিরো আলম, জায়েদ খান, মাহফুজুর রহমান (ড. মাহফুজুর রহমান) লেবেলের খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন। বইমেলা থেকে এ রকম বের হতে হওয়ায় এখন জাতীয় পত্রিকার নিউজ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক নিউজ হবেন। আল জাজিরা, ব্রুট, গার্ডিয়ানে তাদেরকে পাওয়া যাবে। দেশের বই, বইমেলা ও লেখকদের নিয়ে সম্ভবত একমাত্র নিউজটি হবে ওদেরকে নিয়ে। অথচ আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানবে না, প্রতিবছরই কিছু না কিছু ভালো বই বাংলাদেশ বের করে। যেমন ইউরোপ-আমেরিকার লোকজন জানেই না বাংলাদেশ নামক একটা দেশকে ২৩ বছরের আন্দোলন শেষে ৯ মাসের একটা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়। শেষে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেতে হয়।
তিশা-মুশতাকের অপরাধ কোথায়? জানতে চেয়ে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, বাংলাদেশের আইনে ১৮ বছরের একটি মেয়ে বিয়ে করতে পারবে। আইনের কোথাও বলা হয়নি, ৪০ বছরের গ্যাপ থাকলে কাউকে বিয়ে করা যাবে না। তিশা ‘সুগার ড্যাডি’ বা ‘গোল্ড ডিগার’ বিয়ে করল কেন, তাদের বয়সের গ্যাপ এত কেন হবে এসব নিয়ে জাজমেন্টাল হওয়ার রাইট আমাদের থাকতে পারে, থাকা উচিৎ? নাকি আমাদের গাত্রদাহের কারণ ওরা কেনো এরকম অসম সম্পর্কের পর প্রকাশ্য হবে, ফেসবুকে লাইভ করবে, হাত ধরে বইমেলায় যাবে, নিজেদের লেখা বইয়ের প্রচার করবে স্টলে দাঁড়িয়ে?
দীর্ঘ পোস্টে মৌসুমী হামিদ লিখেছেন, সমাজ নির্ধারিত নৈতিকতা, প্রথা, অনুশাসন না মানলে তাদেরকে আমরা একঘরে ও অস্পৃশ্য করে দেব? মানে বিষয়টা কি এমন যে ‘এরকম অসম’ সম্পর্ক করেছ তাই তোমাদেরকে লুকিয়ে থাকতে হবে, প্রকাশ্য হওয়া যাবে না, তোমাদের ভালো থাকার, সুখে থাকার ছবি-ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। তোমরা বই লিখতে পারবে না, লিখলেও বইয়ের প্রচারণা করতে বইমেলায় আসতে পারবে না। এত এত ‘না’ আরোপ করার তুমি কে হে ‘আদম-হাওয়ার’ পুত্র-কন্যারা? ওদের বই পড়তে ইচ্ছা না হলে পড়ার দরকার নেই। ওদের স্টলের সামনে লাইন ধরে দাঁড়ানোর দরকার নেই। ওরা কী ছবি-ভিডিও আপলোড দিলো দেখার দরকার নেই। লাইভে এসে কী ঘোড়ার ডিম বলল জানার দরকার নেই।’
সবশেষে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, দেশের নাগরিক হিসেবে ওদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা বই লেখার সাংবিধানিক অধিকার আছে, সেই বইয়ের প্রচার-প্রচারণা করার অধিকারও আইন সম্মত। ঠিক তেমনই ওই বইয়ের সমালোচনা করা, কিংবা ওই বই কিনে মেলার মাঠে ছিড়ে ফেললেও সমস্যা নেই। কিন্তু যেটা আমরা করতে পারি না তা হচ্ছে ওদেকে হেনস্থা-অপদস্ত করে মেলা থেকে বের করে দেওয়া কিংবা বের করে দিতে সহযোগিতা করা। এই কাজটা অপরাধমূলক। আইনের শাসন ঠিকঠাকভাবে চললে, যারা এই কাজে সংঘবদ্ধ হয়েছিল তাদের প্রত্যকের শাস্তি হওয়ার কথা। আমি এইসব রাস্কেলদের শাস্তি চাই।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ একই কলেজের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলাম তিশাকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন। ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেন তারা। তাদের বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেভাইরাল হয়। যার ফলে সমালোচনার ঝড় উঠে।