ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা
শীতকালে অনেক ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, যেমন-অ্যালার্জি বেশি দেখা দেয়। এ সময় বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। নিতে হবে ত্বকের যত্ন। ত্বকের যত্ন বলতে শুধু মুখের যত্ন বুঝি কিন্তু এটি ভুল। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মুখের স্ক্রিনের পাশাপাশি চুল , ঠোঁট, হাত-পা শুষ্ক হয়ে পড়ে। যত্নের অভাবে তা ফেটেও যায় কারও কারও। শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি খাবার থেকে শুরু করে রেগুলার স্ক্রিনকেয়ার প্রোডাক্ট-সব কিছুতেই পরিবর্তন আনতে হবে।
শীতকাল মানে বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজির সমাহার, যা থাকে পুষ্টিগুণে ভরপুর। এগুলোয় বায়োটিন, কোলাজেনসহ থাকে অন্যান্য উপাদান। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব সবজি রাখুন। হালকা কুসুম গরম পানিতে হাত-মুখ ধোয়া ও গোসল করা উচিত। ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় না খাওয়াই ভালো। শীতকালে আবহাওয়াজনিত কারণে পানি পীপাসা কম থাকে। এ সময় অনেকের ডিহাইড্রেশন হয়। এ থেকে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়ে চুল পড়া, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, চর্মরোগ হতে পারে। তাই এসব সমস্যা সমাধানে বেশি বেশি পানি পান করুন। প্রয়োজনে গরম পানি মিশিয়ে পান করুন। সঙ্গে শীতকালীন ফল, শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। সব বয়সী, বিশেষ করে শিশুদের গরম আরামদায়ক শীতবস্ত্রের পাশাপাশি হাত মোজা, পা মোজা পরে রাখা ভালো। শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই লোশন, তেল ও গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। শৈত্যপ্রবাহ ছাড়া ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ না রেখে স্বাভাবিক আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ দিন। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট শীতের মিষ্টি রোদ উপভোগ করুন, যা ভিটামিন-ডি’র নিশ্চয়তা দেবে। ঘর থেকে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। যাদের ড্রাই স্ক্রিন, তারা সপ্তাহে একদিন মধু কয়েক সেকেন্ড মেসেজ করে ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা কুসুম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।
অনেকেই ভাবি, নারিকেল তেল শুধু চুলে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু নারকেল তেল স্ক্রিনে চমৎকার কাজ করে। দামি ময়েশ্চারাইজার নাগালের বাইরে থাকলে নারকেল তেল রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক নরম থাকবে।
ভ্যাজলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলিও ব্যবহার করতে পারেন। দিনে দুবার (সকাল ও রাতে) ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগানোর আগে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের সিরাম ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন। চুলের যত্নে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পুর সঙ্গে নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ঠোঁটে ভ্যাজলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলির পাশাপাশি গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। যারা লিপস্টিক বেশি ব্যবহার করেন, তারা সপ্তাহে ২-৩ দিন চিনি ও লেবু দিয়ে স্ক্রাব করুন। সপ্তাহে একদিন ঘরে বা পার্লারে পেডিকিউর, মেনিকিউর করুন। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই গ্লিসারিন, ভ্যাজলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করুন। তবে সবার সমস্যা সমান নয়। তাই কোনো একটি সমস্যা অস্বাভাবিক মনে হলে অভিজ্ঞ চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লেখক : চর্ম যৌন লেজার ও কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ
আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।