এস রফিক, ডুমুরিয়া।।
ডুমুরিয়ায় শোলমারী ১০ ভেন্ট স্লূইচ গেটের সামনে পলি অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ ২২ লাখ টাকা কোন কাজে আসছে না। ভিতরে জমানো পানি বের হতে না পারায় বৃহত্তর বিল ডাকাতিয়া ও তৎসংলগ্ন ২০টিরও অধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর ভুক্তভোগী জনগণ গত ৬ মাস ধরে চেষ্টা চালালেও পরি¯ি’তির তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও ভুক্তভোগী জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীঘদিন যাবৎ ডুমুরিয়া উপজেলার জলাবদ্ধ বিল—ডাকাতিয়া অঞ্চলকে পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে কেজেডিআরপি প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৯ সালে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ডুমুরিয়ার শোলমারী নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে সেখানে ১০ ভেন্টের স্লূইচ গেট নির্মান করা হয়। তার ফলে বিল ডাকাতিয়া সংলগ্ন মানুষরা ২২—২৩ বছর ধরে জলাবদ্ধতা মুক্ত হওয়ায় ব্যাপক হারে মিষ্টি পানির চিংড়ি ঘের ও ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ান। এভাবে বেশ কয়েক বছর যাবৎ ভালই চলছিলো। কিš‘ সম্প্রতি ওই স্লূইচ গেটের সামনে পলি পড়তে পড়তে পানির সরা—ভরা এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়ে। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে ডাকাতিয়া বিলে আবার নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ভারী বর্ষায় জলাবদ্ধ পরি¯ি’তি মারাত্মক রুপ ধারণ করে। অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরের আইল পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় মানুষ নিরুপায় হয়ে উ”চ মূল্যে নেট কিনে মাছ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। তারপর বিপদগ্র¯’ মানুষ সংশ্লিষ্ট রংপুর, রঘুনাথপুর,গুটুদিয়া ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান—মেম্বররা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে হাজির হয়ে সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন। তখনই বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের মানুষ তথা ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ প্রশাসনিক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকাদারের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গেটের সামনের পলি নিষ্কাশনের জন্য ড্রমি বুস্টার দিয়ে ১ মাসের বেশি সময় ধরে পলি তোলার চেষ্টা করেন। কিš‘ তাতেও পানি নিষ্কাশনে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি না ঘটায় উপজেলা চেয়ারম্যান, রংপুর, রঘুনাথপুর, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান—সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা ডুমুরিয়া—ফুলতলাথর এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দথর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার প্রেক্ষিতে গত ২৮ আগষ্ঠ এমপি মহোদয় ডুমুরিয়ার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খুলনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে ওই গেটের সামনে ২২০ মিটার লম্বা, ৫০ মিটার চওড়া ও ৪ মিটার গভীর করে পলি অপসারণ করার কার্যাদেশ দেন। এরপর ঠিকাদার প্রথম থেকেই লোকাল ড্রেজার দিয়ে পলি তোলার কাজ শুরু করেন। কিš‘ পানির মধ্যে নরম পলি পাড়ে ফেললে সাথে সাথে আবার গেটের খালে পড়ে যায়। এতে বরাদ্দের ২২ লাখ টাকা জলে ভেসে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আশানুরুপ কোনো ফল না দেখে প্রায় প্রতিদিনই জলাবদ্ধ এলাকা থেকে গাড়ি ভরে শথশথ মানুষ এসে নিজেরাই নদীতে নেমে পলি অপসারণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি ঠিকাদারের স্কেভেটরও পলি তোলার কাজ করছে। কিš‘ তাতেও আশানুরুপ জল—নিষ্কাশন হ”েছ না।
কথা হয় রঘুনাথপুর ইউনিয়নের মেম্বর রমেশ চন্দ্র বৈরাগীর সাথে তিনি বলেন, গেটের সামনে থেকে যে পলি তুলা হ”েছ, পরে জোয়ারের পলিতে তা অনেকাংশে আবার ভরাট হয়ে যা”েছ। তাছাড়া গেটের ভেতরের পাশেও পলি পড়ে নদীর নাব্যতা হারিয়ে মাত্র ১ থেকে দেড় ফুট গভীরতা আছে। আর আমাদের বিল ডাকাতিয়ার মধ্যে পানি আছে ৫—৬ ফুট। তা হলে আমরা কী ভাবে বাঁচবো ? উপজেলার মুজারঘুটা গ্রামের ব্রিঞ্চি মন্ডল বলেন, বিল—ডাকাতিয়ার কোনো ঘেরের পাড় জাগনা নেই। নেট দিয়ে কোনো রকমে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছি। আর সবজি তো আগেই শেষ।
উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি অধ্যক্ষ সমরেশ মন্ডল বলেন, এতোদিনে চেষ্টার পরও যে অব¯’া, আর আমাদের ডাকাতিয়া বিলে পানির গভীরতা ও শোলমারী নদীর উ”চতারও যা অব¯’া তাতে মনে হ”েছ, ভবদহ গেটেথর মতো বড় ধরণের বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক পাম্প মেশিন বসাতে পারলে, হয়তো আমরা এই জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে পারবো।
পলি অপসারণ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক তদারককারী উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর বিল ডাকাতিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনে স্লূইচ গেটের পলি অপসারণে কতৃপক্ষ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ ফুট পানি নেমেছে। গেটের ভেতরের পাশ থেকে সামনে শোলমারী নদীর তলদেশ উচু হওয়ায় আশানুরুপ পানি নামছে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতা মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ স্যার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকী করছেন। প্রতিদিন শথশথ ভুক্তভোগী জনগণ এখানে এসে পলি তুলতে নেমে পড়ছে। আর ঠিকাদারও কিছু কাজ করেছে। পানি কিছুটা নেমেছে তাতে কোন ভাল ফল পা”েছন না জনগণ। তবে ¯’ায়ী সমাধানের জন্য বড় পরিকল্পনা নিতে হবে।