কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি)২০২২ -২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সোহানুর রহমান সোহান। তিনি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাঁর ইবিতে ভর্তি ও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সোহান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে।
সোহান যখন ৬ মাসের মাতৃগর্ভে, তখন তাঁর বাবা মারা যান। মা মোছা. বিজলী খাতুন অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহান ছোট।
জানা গেছে, অর্থের অভাবে নবম শ্রেণি থেকেই পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয় সোহানের। সেসময় কুমারখালীর তৎকালীন ইউএনও মো. শাহীনুজ্জামানের সহযোগিতায় তিনি পড়াশোনা চালিয়ে নেন এবং যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাণিজ্যে বিভাগ থেকে ৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর আরেক ইউএনও রাজীবুল ইসলাম খানের সহযোগিতায় তিনি কুমারখালী সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সোহানের স্বপ্ন। গতবছর প্রথমবারের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়নি তাঁর। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৫৬ দশমিক ৫০ স্কোর নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।
সোহানুর রহমান সোহান বলেন, সারাজীবন তাঁর মাকে পরের বাড়িতে কাজ করতে দেখেছেন। সেই কাজের টাকায় তাদের সংসার চলে। তাঁর মায়ের যা আয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে পড়াশোনা চালানো সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, নবম শ্রেণি থেকেই অর্থের অভাবে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিছিল। ইউএনও শাহীনুজ্জামান তাঁর আজও তাঁর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন।
সোহানের মা বিজলী খাতুন বলেন, তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। সেখান থেকে সামান্য যা পান, তা দিয়ে চলে সংসার। কিন্তু এই টাকা ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সোহান খুবই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিষদের পক্ষ তিনি সোহানকে যেটুকু পারেন সহায়তা করবেন। একইসঙ্গে সোহানের পড়াশোনার ব্যয়বহনে অন্যদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।