এখনো তৈরি হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় তালের ডোঙা

13

নিজস্ব প্রতিনিধি।।

গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া অন্যতম একটি বাহন হলো তালগাছ দিয়ে তৈরি করা তালের ডিঙি। একটি তালগাছ লম্বালম্বিভাবে সমান দু’ভাগে কেটে মাঝখানের নরম আশের অংশটুকু তুলে ফেলে এগুলো তৈরি করা হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের খাল বিলে চলাচলের জন্য এর বিকল্প একসময় ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে এই বাহনও বিলুপ্তির পথে।

একসময় অনেকের পেশা ছিল তালের ডিঙি তৈরি করা। বর্তমানে তাদের দেখা মেলা ভার। তবে সেই ডিঙি তৈরি পেশার সঙ্গে জড়িত একজন কারিগরের সঙ্গে দেখা মিলেছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের স্থানীয় গোচড়া নামক বাজারে। এখানকার বাসিন্দা আজিজ মল্লিক বেশ কয়েকটি তালগাছ কেটে ডিঙি নৌকা তৈরি করছেন।

তালগাছ থেকে তৈরি ও দেখতে ডিঙি নৌকার মতো বলেই হয়তো একে তালের ডোঙ্গা বলা হয়। তালের নৌকা বলেও এর প্রচলিত নাম আছে। বর্ষাকালে দেশের নিম্নভূমি, ডোবা, নালা, খাল, বিল যখন পানিতে থইথই করতে থাকে, তখন সেসব জলাভূমিতে যাতায়াত ও মাছ ধরার জন্য কোন্দা বা তালের ডোঙ্গা ব্যবহার করা হয়।


একটা তালের ডোঙ্গা সাধারণত ১৫-২০ ফুট লম্বা হয় এবং চওড়া হয় ১-২ ফুট। গাছের গোড়ার দিকটা থাকে গোলাকার ও বদ্ধ, অন্য প্রান্ত থাকে খোলা। তাই চলার সময় সে প্রান্তের মুখ কাঁদা দিয়ে বন্ধ না করলে পানি উঠে তালের ডোঙ্গা ডুবে যেতে পারে। এক-দু’জনের বেশি সাধারণত একটা তালের ডোঙ্গায় ওঠা হয় না। বৈঠা নয়, একটা লম্বা চিকন শক্ত বাঁশের টুকরো দিয়ে পানির মধ্যে ঠেলে ঠেলে তালের ডোঙ্গা চালানো হয়।

আজিজ মল্লিক বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। একসময় ডিঙির চাহিদা ছিল প্রচুর। তখন বর্ষায় দম ফেলার সময় পেতাম না। কিন্তু বর্তমানে এর তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে। তারপরও গত বছরের আগের বছর ২২টি, গতবছর ১২টি ডিঙি তৈরি করে বিক্রি করেছি। এই বছর ৮টি ডিঙি তৈরি করেছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি তালগাছ আমি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় ক্রয় করি। তারপর সেটা দু’ভাগে কেটে দুটি ডিঙি তৈরি করা যায়। যা প্রতিটা ৭-৮হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকি। আর এজন্য উপযুক্ত তালগাছ বাছাই করে ক্রয় করতে হয়।

আজিজ মল্লিক জানান, এ কাজে তার পরিবারের অন্যান্য লোকজন তাকে সহায়তা করে থাকেন। বর্তমানে তার স্ত্রী তালপাখা তৈরিতে তাকে সহায়তা করছেন।


স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল হোসেন বলেন, আজিজ চাচা আমাদের এলাকার একজন কর্মঠ মানুষ। তার তৈরি হাতপাখা ও তালগাছের ডিঙিতে শিল্পির আচড় থাকে। তাকে আমরা কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি। বয়স তার কাছে একটা সংখ্যামাত্র।

সিদ্ধকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান কাজি জেসমিন ওবায়েদ বলেন, তিনি আমার ইউনিয়নের সবচেয়ে বয়স্ক ও কর্মঠ মানুষ। তার জন্য দোয়া রইলো। যারা নিজের পেশাকে আঁকড়ে থাকতে চান তিনি তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।