বাগেরহাটে পাউবো কর্মকর্তাকে মারধর, দুদিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

3

বাগেরহাট প্রতিনিধি।।

বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলীকে তার কার্যালয়ে ঢুকে মারধর ও তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ভুক্তভোগীর দেওয়া লিখিত অভিযোগ এখনও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর ওই রাতে থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগের কোনো রিসিভ কপিও দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলী। এখন মামলা হবে কি না সে বিষয়েও তিনি আর কিছু ভাবছেন না।

মারধরের শিকার প্রকৌশলীর নাম মুহাম্মদ আবু হানিফ। তিনি পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ওভাবেই আছে। তার (অভিযোগের) কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হয়নি। আমি রিসিভ কপি চেয়েছিলাম, তারা (পুলিশ) দেয়নি। আমি আর যোগযোগও করিনি। তদন্ত করে দেখে জানাবে বলেছে।’

তবে ঘটনার পর পুলিশ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন, এটা মানষিক অশান্তি। নিজের কাছেও খারাপ লাগতেছে। হটাৎ করে একটা অঘটন ঘটে গেল। ওই রাতের পর আর কোনো কিছু হয়নি। অফিস থেকে খোঁজ খবর নিতেছে, কি অবাগেরহাটে পাউবো কর্মকর্তাকে মারধর, দুদিনেও মামলা নেয়নি পুলিশবস্থায় আছি না আছি।’

ভুক্তভোগী এ প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘ফিল্ডে কাজ চলতেছে। এখন যাওয়াটা রিকস (ঝুঁকি) হয়ে গেছে। বিষয় হচ্ছে, শান্তি চাই। এখন মামলা হোক, আর না হোক। ইজিলি (সহজে) যেন চলাফেলা করতে পারি- এটাই দরকার। কাজ করতে পারি। এখন কি করব? আর তো কিছু করার নাই।’

এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘উনারা (পাউবো) একটা অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

অভিযোগের রিসিভ কপি না দেওয়া বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, ‘একজন অভিযোগকারী অভিযোগ দেবেন, তারপর তদন্ত হবে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগকারী রিসিভ কপি পাবে কিনা আবারও জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। অভিযোগকারী অভিযোগ দেবেন, তারপর আমরা ব্যবস্থা নেব।’

অভিযোগ করলে থানা থেকে লিখিত অভিযোগের কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে খুলনা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, যেহেতু মারধরের ঘটনা, সেহেতু মামলা হবে। এখন থানায় যদি মামলা না নেওয়া হয়, তবে ভুক্তভোগী কোর্টে যাবেন। দেখা যায় প্রায়ই পুলিশ বলে, আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। অর্থাৎ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে মামলা হবে। এটা কিন্তু আইন না। আইনে আছে, কেউ অভিযোগ দিলে তা এজাহার হিসেবে গণ্য করতে হবে। তার পর তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলে পুলিশ সেভাবে প্রতিবেদন দেবে। এটা একটা ছলচাতুরি। অনেক সময় দেখা যায় অভিযোগ আজ হলো, পাঁচদিন পর মামলা হিসেবে এন্টি হলো। এতে আসামিরা বেনিফিট পাবে।’

পাউবো সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ৮-১০ জনের একটি দল ৪টি মোটরসাইকেলে শহরের সরুই এলাকার পাউবোর বাগেরহাট সদর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যায়। তারা সেখানে বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা আবু হানিফকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান তাকে ডেকেছেন। তবে ওই প্রকৌশলী তাদের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। এরপর মারধর করে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ওই কার্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য নিত্যানন্দ এগিয়ে গেলে তাকে মারধর করা হয়। কার্যালয়ের গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করা হয়।

এর আগে মোটরসাইকেল নিয়ে অভিযুক্তরা পাউবোর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ে যায়। সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে একে একে চারটি মোটরসাইকেলে ১০ যুবক আসেন। তারা সবাই কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তারা প্রতিটি কক্ষে ঘোরেন। সেখানে ওই কর্মকর্তাকে না পেয়ে ৯টা ৩৫ মিনিটে আবারও মোটরসাইকেলে বেরিয়ে যান।

তবে ছাত্রলীগের দাবি, তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখে টাকা দাবি করেছিলেন ওই কর্মকর্তা। এখন বিল না দেওয়ার জন্য তারা এই অভিযোগ করছেন।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান জানান, যে প্রকৌশলী অভিযোগ দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমাদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েকদিন আগে তিনি আমাদের কাছে একটা বড় অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমরা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায়, তিনি আমাদের বিলটি আটকে দেন। তাকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। কোনো মারধর করা হয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে পাউবোর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘তারা বিল পাওয়ার দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। তাদের বিলের কাগজ থাকলে তারা তা দেখাক। আমরা তো আর পকেট থেকে টাকা দেব না। তারা টাকা পেলে আমরা লিখব। সরকারি টাকা। তারা কাগজপত্র দেখাতে পারলে পেয়ে যাবেন।’