আওয়ামী লীগে স্বস্তি তিন কারণে

12

ঢাকা অফিস।।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আসা বিদেশি কূটনীতিকরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংলাপ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে কথা না বলায় স্বস্তি এসেছে আওয়ামী লীগে। এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারক নেতারা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।

তবে বিএনপির আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগে। শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টিতে, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। আবার নির্বাচন বর্জনের নামে ষড়যন্ত্র করতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন। তাদের সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে আসছে বিএনপি। তারা বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিও করছে। তাদের আশা ছিল, বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের দাবির পক্ষে কথা বলবেন। সেটা হয়নি। বিদেশি প্রতিনিধিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা কিংবা সরকারের পদত্যাগ বিষয়ে কোনো ধরনের ইঙ্গিতমূলক মন্তব্যও করেননি। কোনো আলোচনায় এসব প্রসঙ্গ আসেনি। অর্থাৎ, বিদেশিদের সমর্থন পায়নি বিএনপি। এটা আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তিদায়ক।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে কোনো মত দেননি বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জনগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাই করবে। জনগণের এই অধিকার আদায়ে তাঁর দল সব সময়ই সংগ্রাম করছে। এ জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আমরাই চালু করেছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই নিশ্চয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন কূটনীতিকরা। এটা স্বস্তিকর।

এদিকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিকের দেখা না করার বিষয়টিকেও নানাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেননি দুই কূটনীতিক। তারা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় না করায় নানা প্রশ্ন উঠছে। আবার সংলাপ নিয়েও তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি কূটনীতিকরা।

সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগেও আগ্রহ নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই নির্বাচনকালে সরকারের দায়িত্বে থাকবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সংলাপ ইসির সঙ্গে হতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যদি কোনো কথা বলতে হয়, সেটা ইসির সঙ্গে বলতে হবে। বিএনপি ইসির কাছে যেতে পারে। ইসি ডাকলে আওয়ামী লীগও যাবে।

এদিকে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, ওই দু’দিন ঢাকার প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকবে দলের নেতাকর্মীরা। শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি এবং ১৯ জুলাই বিকেল ৩টায় সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত শোভাযাত্রা করা হবে।

বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজধানীসহ সারাদেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং নৈরাজ্য চালানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, জনসম্পৃক্ততা না থাকায় আন্দোলনে সফল হওয়ার সুযোগ নেই বিএনপির। তারা নির্বাচন বর্জন করলে জনগণের সম্পদ ধ্বংসের রাজনীতিতে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। শেষ মুহূর্তে তারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনে আসতে পারে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩০ জুলাই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও শোকের মাস আগস্টে ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় জনসভা আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ সময় দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ নিরসনের উদ্যোগ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন। এই মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে আরও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন।