কালের সাক্ষী সাড়ে পাঁচশ’ বছরের খান জাহান আলী মসজিদ

21

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি।।
যশোরের অভয়নগরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে রয়েছে হযরত খান জাহান আলী (রহ:) নামের মসজিদ। যে মসজিদে গত সাড়ে পাঁচশ’ বছর ধরে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজসহ তারাবি নামাজ আদায় হয়ে আসছে। সাড়ে পাঁচশ’ বছর আগে মুসলিম ধর্ম প্রচারক ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার তৎকালীন স্থানীয় শাসক হযরত খান জাহান আলী (রহ:) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ। উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামে ভৈরব নদের তীরে মসজিদটির অবস্থান। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকের শেষদিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ:) তার অনুসারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে যশোরের ১২ বাজার এলাকা হতে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। চলতি পথে তিনি রাস্তা নির্মাণ, দীঘি খনন ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করেন।

উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে সড়ক ও নদী পথে শুভরাড়া গ্রামে যাওয়া যায়। সেখানে অসংখ্য গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে ভৈরব নদের তীরে এক গম্বুজ ও চার মিনারবিশিষ্ট খান জাহান আলী (রহ:) নামের মসজিদটি রয়েছে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোর ও খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ‘খলিফাতাবাদ’- অধ্যায়ে খান জাহান আলী (রহ:) কর্তৃক নির্মিত মসজিদের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত খান জাহান আলী (রহ:) নড়াইল জেলার দিকে না গিয়ে ভৈরব নদের কুল ধরে অভয়নগরের শুভরাড়া গ্রামে পৌঁছান।

খ্রিষ্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোনো এক সময় তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাশুয়াড়ী গ্রামে মাত্র এক রাতের মধ্যে একটি দীঘিও খনন করেন। সরজমিন শুভরাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে লাল পোড়া মাটির রঙের মসজিদের মাঝামাঝি একটি গম্বুজ ও চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লেখা অনুযায়ী বর্গাকার মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৫ দশমিক ১৩ বর্গমিটার। এর চার কোণায় ৪টি অষ্টমকোণাকৃতি টারেট রয়েছে। মসজিদের ভেতরের আয়তন ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি বাই ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের মাপ এক মিনারের মধ্যবিন্দু হতে অন্য মিনারের মধ্যবিন্দু পর্যন্ত ২৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে ৩টি দরজা আছে। পূর্বদিকে সদর দরজা এবং এর খিলান ১১ ফুট উঁচু এবং ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের। বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত মসজিদে ছোট-বড় সব ধরনের ইট রয়েছে। গ্রামবাসী ও প্রবীণ লোকজন জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হতো।

পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে এই মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেখতে আসছে। আকৃতি ঠিক রেখে আরও বড় করা এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিনের থাকার সুব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, খান জাহান আলী মসজিদ ও দীঘিসহ অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর জানান, শুভরাড়ায় খান জাহান আলী (রহ:) মসজিদ নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কাজ করছে। এই উপজেলায় আর কোনো গ্রামে প্রাচীন স্থাপনা থাকলে সেগুলো সংস্কারে উপজেলা পরিষদ সার্বিক সহযোগিতা করবে।