গ্রাহক চাবি ছাড়াই খুলে গেলো এমপিপুত্রের লকার

6

যশোর অফিস।।

যশোরে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখায় লকারকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় চলছে। গ্রাহক চাবি ছাড়াই ছেলের লকার খুলে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায়। এ নিয়ে সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে ধাক্কাধাক্কি ও বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার দুপুরে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ কুমার রায় তার স্ত্রী নিয়তি রানী রায়কে নিয়ে জনতা ব্যাংক যশোর করপোরেট শাখায় যান। নিয়তি রানীর নামে ভাড়া নেওয়া ব্যাংকের লকার খুলে সংরক্ষিত মালামাল নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ব্যাংকে যান। ব্যাংকের এজিএম রত্না চক্রবর্তী নিয়তি রানীর লকার না খুলে তাদের ছেলে রাজীব রায়ের নামে ভাড়া নেওয়া লকার খুলে ফেলেন। দুটো চাবি (একটি গ্রাহকের ও একটি ব্যাংকের) একসঙ্গে ছাড়া লকার খোলার কথা না। কিন্তু শুধু ব্যাংকের চাবিতে খুলে যাওয়ায় লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্য।

এ সময় ওই লকারের নিরাপত্তা নেই দাবি করে গচ্ছিত মালামাল নিজের জিম্মায় নিতে চান রনজিৎ রায়। ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা এজিএম ইমরান হোসেন লিখিত দেওয়ার কথা বলেন। তখন সংসদ সদস্য খাতায় স্বাক্ষর করে নিতে বলেন। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তারা গড়িমসি করেন। এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় সংসদ সদস্য ক্ষুব্ধ হন। পরে লকারের মালিক রাজীব রায়ের মোবাইল ফোনে মৌখিক সম্মতিতে লকারের মালমাল সংসদ সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।

এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে প্রধান কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যান। এতে ব্যাংকে হইচই পড়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংকে পুলিশ গিয়ে হাজির হয়।

তবে সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে ধাক্কার বিষয়টি অস্বীকার করে মঙ্গলবার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই জনতা ব্যাংকে তাদের একটি লকার ভাড়া নেওয়া। সেটি এখন তার স্ত্রীর নামে। পরে ছেলের নামে আরও একটি লকার ভাড়া নেওয়া হয়। লকার খুলতে দুটি চাবি লাগে। একটা তাদের কাছে, অন্যটি ব্যাংকের কাছে থাকে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীর লকার খুলতে যাই। কিন্তু চাবি ছাড়াই ছেলের লকার ব্যাংকের কর্মকর্তা খুললেন কীভাবে?

ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ সদস্য বলেন, লকারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করে মালামাল নিতে চাইলে লিখিত দিতে বলেন। খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিতে বললে তারা সম্মতি না দিয়ে আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। তখন রাগ করে ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে যাই। আমি ব্যাংকের কাউকে ধাক্কা দেইনি।

এদিকে সংসদ সদস্য ও ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রাথমিক তদন্ত করতে মঙ্গলবার দুপুরে যশোরে এসেছিলেন খুলনা বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুণ প্রকাশ বিশ্বাস। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার হেড অফিস থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যশোরের প্রধান শাখায় গিয়ে উদ্ভূত ঘটনা জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে। এরপর চূড়ান্ত তদন্ত দল ঢাকা থেকে পাঠানো হবে।

একটি চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকারের তালায় কোনো সমস্যা না থাকলে একটা চাবি দিয়ে লকার খোলা সম্ভব নয়।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যশোরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখায় লকার ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ব্যাংকে ছোট ও বড় দুই ধরনের লকার ভাড়া দেওয়া হয়। ছোট লকারের বার্ষিক ভাড়া ২ হাজার ৩০০ এবং বড় লকারের ৪ হাজার ৬০০ টাকা। লকার খোলার জন্য ব্যাংক ও বরাদ্দ নেওয়া ব্যক্তির কাছে দুটি চাবি থাকে। লকারে দুদফা তালা থাকে। লকার খুলতে হলে দুপক্ষের দুটি চাবিই তালায় প্রবেশ করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ইচ্ছে করলেই লকার খুলতে পারবেন না।

এদিকে, সোমবারের এই ঘটনা মঙ্গলবার জানাজানি হলে এ নিয়ে শহর জুড়েই তোলপাড় চলছে। এই শাখাতে লকার ভাড়াটিয়ারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। নিজেদের গচ্ছিত সম্পত্তি ঠিক আছে কিনা মঙ্গলবার সকাল থেকে কয়েকজন লকার ভাড়াটিয়া ব্যাংকে এসে খোঁজ খবর নিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির একটি সূত্র। গ্রাহকের ভাড়া করা লকারের নিরাপত্তা ও সেবা নিয়ে তোলা অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।

তবে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক যশোর প্রধান শাখার এজিএম ইমরান হোসেন শামীম বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। ব্যাংকের লকারে ত্রুটি ছিল। ত্রুটি থাকলেও কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। এটি নিয়ে সংসদ সদস্যের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান হয়েছে।