পাইকগাছায় বিলুপ্ত প্রায় বিচিত্র্য খৈ ফল গাছ

4
Spread the love

পাইকগাছা প্রতিনিধি।।
খৈ বা জিলাপি ফল গাছ। আমাদের দেশে এমন অনেক বিচিত্র ফল রয়েছে। যা আমরা অনেকেই চিনি না বা তার খোঁজ খবর রাখি না। এ রকম একটি বিচিত্র ফলের নাম হচ্ছে খৈ ফল। পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশে যে ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় এসব ফলের কিছু কিছু আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। ফিলিপাইনে এ গাছ প্রধানত ফলের জন্য আবাদ করা হয়। আমাদের দেশে এই ফল এমনিতেই হয়ে থাকে। তবে অনেকেই শখ করে বাড়ির চার দিকে বেড়া হিসাবে বা রাস্তার পাশে এ ফলের গাছ লাগিয়ে থাকলেও এখন আর গাছটি আগের মতো চোখে পড়ে না। এই রহস্যময় পৃথিবীতে বহু রকমের ফল রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে অনেক ফল রয়েছে যেগুলো বিচিত্রময়। এই ফল দেখতে অনেকটা জিলাপির মতো বলে একে জিলাপি ফল বলা হয়। কেউ কেউ আবার একে বলেন, খৈ ফল, আবার অঞ্চল ভেদে অনেকেই একে খইয়ের বাবলা বা দখিনী বাবুলও বলে থাকে। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম পিথেসেলোবিয়ামে ডুলসি, গ্রিক পিথেসেলোবিয়ামের অর্থ বানরের ফল, আর লাতিন ডুলসি মানে মিষ্টি।
খৈ বা জিলাপি ফল গাছের কান্ডে ও শাখা-প্রশাখা লম্বা, এলোমেলো, বাকল ধূসর এবং তীক্ষè কাঁটাযুক্ত। এর পাতা সবুজ এবং পাতা জোড়ায় জোড়ায় সংযুক্ত থাকে। এ গাছের দেহ সুন্দর পেঁচানো। গাছ কেটে ফেললেও এর গোড়া থেকে দ্রুত নতুন ডাল গজিয়ে যায়। চারটি উপপত্র পাতার গোঁড়ায় কাটা থাকে। পুরনো পাতা ঝরে দ্রুত নতুন পাতা গজায়। পাতা দেখতে অনেকটা কাঞ্চনের পাতার মতো। খৈ ফলের বীজ থেকে সহজে চারা হয়। তবে নতুন গাছ সৃষ্টির জন্য এর শাখা কলমও ব্যবহার করা যায়।
এ গাছের ফুল আকৃতিতে বেশ ছোট। এর ফুল ফাগ্লুনে ফোটে এবং চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এই ফল পাকে। এই ফল দু’টি খোসার মধ্যে শাঁস ও বীজ গোলাকারভাবে মালার মতো সাজানো থাকে। এর প্রতিটি ফলে বীজদানা থাকে আট থেকে দশটি। এই ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে কিন্তু পাকলে এর খোসা টকটকে লাল হয়ে ফেটে যায়। ভেতরের সাদা শাঁস বেশি পাকলে অনেক সময় তাতে লালচে দাগ পড়ে। এর বীজ দেখতে শিমের বীজের মতো এবং বীজের রং অনেকটা কালো। এর শাঁস পুরু, নরম, মিষ্টি ও কসযুক্ত। ফল দেখতে জিলাপির মতো পেঁচানো। গ্রামের শিশুরা গ্রীষ্মকালে এ ফল সংগ্রহ করে থাকে। এর ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। তাই ছেলে- মেয়েদের কাছে প্রিয় ফল। তবে বাণিজ্যিকভাবে এ ফল বিক্রি হয় না।
কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এই ফলটি খুলনার উপকূল এলাকা পাইকগাছা থেকে গাছটি হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই ফলটি এখন আর চেনে না। গত কয়েক দশক ধরে ইটভাটার মালিকেরা ভাটার জ্বালানি হিসেবে গাছটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া উপকূল এলাকায় নৌকা তৈরির কাঠ হিসাবে ব্যাপক চাহিদা খাকায় গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্ত গাছ লাগানো হয় না। ফলে দিন দিন এ গাছগুলো এসব এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এই খৈ ফল গাছ এমনিতেই হয়ে থাকে। তবে অনেকেই শখ করে বাড়ির চার দিকে, রাস্তার পাশে বেড়া হিসাবে এ ফলের গাছ লাগিয়ে থাকেন। খুলনা জেলার যশোর, খুলনা, বরিশাল, পুটয়াখালী ও ভোলায় যথেষ্ট পরিমাণ খৈ বা জিলাপি ফলের গাছ দেখা যায়।