ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।।
মাত্র ১ ঘণ্টার ছোট একটি ফুলবাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে ২০ লক্ষাধিক টাকার ফুল। কাকডাকা ভোরে শতশত ক্রেতা-বিক্রেতা, ফুলচাষি আর ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে হলুদ-কমলা রঙে অনন্য রূপ ধারণ করে ফুলবাজারটি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গান্নায় শুধু গাঁদা ফুলের এ বাজার গড়ে উঠেছে। বিপুল পরিমাণ গাঁদা ফুলের সরবরাহ থাকায় কৃষি বিপণন কেন্দ্র এখানে শেড নির্মাণ করে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে ওঠা হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলের মান উন্নত হওয়ায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ। তাই মাঠ থেকে ফুল তোলা, মালা গাঁথা আর বাজারে বিক্রির জন্য ব্যস্ত সময় পার করেন এখানকার প্রায় দুই হাজার কৃষক। বারো মাসই এখানে গাঁদা ফুল বিক্রি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরে কৃষকদের কাছ থেকে ফুল কিনে ব্যবসায়ীরা তা শেডে সাজাতে থাকেন। পুরো শেড ফুলে ফুলে ভরে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। এরপর শুরু হয় প্যাকেজিং, মোড়কজাত ও বাজারজাত করণের কাজ। বিকেলের মধ্যে ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে তোলা হয়। আর রাতেই এসব ফুল পৌঁছে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বড় বড় বাজারে।
ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার ৬নং ইউনিয়নের নাম গান্না। ২৬টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়নটিতে প্রায় ২৬ হাজার মানুষের বসবাস। গান্না বাজার ঝিনাইদহ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে অবস্থিত। এখানে প্রতিদিন ভোরে বসে গাঁদা ফুলের বাজার। রাস্তার ধারে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে রেখে লম্বা লাইনে চলে ফুল বেচাকেনা। ফুলের মান ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ঝোপা দরে বিক্রি হয় ফুল। ২০টি মালায় এক একটি ঝোপা বানানো হয়। সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় কৃষকদের সব ফুল।
ফুলচাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২৫ কাঠা জমিতে তিনি ফুলচাষ করেছেন। প্রতিদিন বাজারে তিন থেকে চার হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারেন তিনি।
কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে ফুল বিক্রি করতে আসেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, গান্না বাজারে ফুল আনার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যায়।
গান্না বাজার এলাকার বাসিন্দা মহিদুল ইসলাম। তার ফুলের চাষ কিংবা ব্যবসা নেই। তারপরেও এই ফুলবাজারকে ঘিরে তার কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে ফুল সাজিয়ে-গুছিয়ে দেওয়াসহ কৃষক-ব্যবসায়ীদের নানা কাজ করে দেন তিনি। এতেই চলে মহিদুলের মতো অনেকের রুটি-রুজি।
ফুল ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান জানান, প্রচুর ফুলের আমদানি হয় গান্না বাজারে। তারা এই ফুল ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, রাজবাড়ী, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠান ট্রাকভর্তি করে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা গোলাম মারুফ খান জানান, সদর উপজেলার গান্না এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গাঁদা ফুলের চাষ হয়। ফুলচাষিদের বাজার অবকাঠামো, সংরক্ষণ ও পরিবহন সুবিধার্থে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিপণন অধিদফতর।
গান্না বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার গাঁদা ফুল বিক্রি হয় বলে জানান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, শুধু খুলনা বিভাগের মধ্যে নয় সারা বাংলাদেশের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলাতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ হচ্ছে। এখানকার গাঁদা ফুলের গুণগত মান খুবই ভালো। তাই প্রতিবছর এ ফুলের চাষ বাড়ছে।