স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যানচালকের সংসার

1
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ভবন উদ্বোধন ও হস্তান্তরের পর ১১ মাস পার হয়েছে। তবে এক দিনও আসেননি চিকিৎসক, রোগী বা দায়িত্বশীল কেউ। এতে ক্ষুব্ধ সবাই।
যদুবয়রা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নীতকরণ বা পুনর্র্নিমাণ প্রকল্প হাতে নেয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ পায় পাবনার ঈশ্বরদীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকশন। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে ৪ মার্চ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। কাজ শেষে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

তবে ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য নিজেদের উপযুক্ত কর্মকর্তা দাবি করেন দুজন। তাঁরা হলেন-উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আকুল উদ্দিন ও তৎকালীন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল বাসার আব্দুল মুত্তালিব। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তাঁদের চিঠি চালাচালি শুরু হয়। এক পর্যায়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে ভবনটি উদ্বোধন হয়।
এরপর দুই কর্মকর্তার মধ্যে মনোমালিন্য ও জটিলতা দেখা দেয়। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ভবনটি হস্তান্তরের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ৩০ মার্চ চিঠি দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে। এ নিয়েও কর্তাদের কাছে চিঠি চালাচালি চলে। এভাবে ১১ মাসেও চিকিৎসা শুরু হয়নি ভবনটিতে। দেখাশোনার নামে সেখানে সংসার পেতেছেন স্থানীয় ভ্যানচালক শেখ আলম (৭১)।
যদুবয়রা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, নতুন ভবন চালু না হওয়ায় পুরোনো ভবনে চিকিৎসা চলছে। তবে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় কলেজছাত্র রাসেল বলেন, তদারকির অভাবে এত বড় প্রকল্প অকেজো পড়ে রয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রাখা ব্যাটারিচালিত ভ্যান। প্রবেশপথের খোলা গেট দিয়ে ভেতরে তাকাতেই চোখে পড়ে মশারি টানানো কাঠের চৌকি। শেখ আলম মেঝেতে বসে পান-সুপারি-চুন দিয়ে খিলি বানাচ্ছিলেন। পাশেই রাখা চা-পানের সরঞ্জাম। ভবনে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ডেলিভারি ও ওয়ার্ড এবং স্টোরের আলাদা কক্ষ রয়েছে। তবে আসবাবপত্রে ধুলোবালি জমেছে। কোথাও কোথাও মাকড়সা বাসা বেঁধেছে। দোতলায় চিকিৎসকদের আবাসিক কক্ষ দুটি ফাঁকা।
বৃদ্ধ শেখ আলম বলেন, প্রায় এক বছর দুই মাস আগে ঠিকাদার ও দুই ‘স্যার’ তাঁর কাছে ভবনের চাবি দিয়ে চলে গেছেন। তিনি ভবনের দেখাশোনার পাশাপাশি সংসার পেতেছেন। সেখানকার বিদ্যুতের ভ্যানে চার্জ দেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করেন। তবে কোনো কর্মকর্তা খোঁজ নেননি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আতিয়ার রহমান বলেন, ভবন প্রস্তুত হলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ভবনের মালিক দাবি করায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর ও উদ্বোধন করা হয়। তবে পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঝামেলা তৈরি করে রেখেছেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আকুল উদ্দিন বলেন, ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের। তাঁর কাছ থেকে ঠিকাদার জমি বুঝে নিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার ভবন নির্মাণে অনিয়ম করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে হস্তান্তর করেছেন।
ভবনটি উদ্বোধনের সময় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকা আবুল বাসার মো. আব্দুল মুত্তালিব সম্প্রতি অবসরে গেছেন। তিনি ফোনে বলেন, ভবন ও জায়গাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের। কেন্দ্রটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো জনবল নেই। সে জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় উদ্বোধনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় উদ্বোধনের পর তিনি হস্তান্তরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে চিঠি দিলেও ভবনটি গ্রহণ করেননি। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।
বর্তমান পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক বলেন, মাসখানেক আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি জানতে পারেন দুই কর্মকর্তার ঠেলাঠেলিতে ভবনটি অকেজো পড়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।