‘অবৈধ টাকায়’ কোটিপতি শাহজাহান

2
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার।।

চাকরিজীবনে দুর্নীতির টাকায় সম্পদ গড়েছেন যশোরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী। রয়েছে দুটি বহুতল ভবন, নগদ অর্থ ও দামি গাড়ি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালেও ধরা পড়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

গত বছরের ডিসেম্বরে খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক আল আমিন। তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’

দুদক সূত্র জানায়, শাহজাহান আলী ১৯৭৮ সালে এসএসসি ও ১৯৮০ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮৪ সালে বাণিজ্যে স্নাতক ও ১৯৯০ সালে এলএলবি পাস করেন। পরে যোগ দেন চাকরিতে। তিনি দেশের বিভিন্ন উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেছেন। যশোর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার থেকে বর্তমানে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) আছেন।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন কাগজপত্রে শাহজাহান আলীর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ড এলাকার আলতাফ হোসেন রোডের ডাক্তারবাড়ি গলির ২৯/১৮ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ আছে। বাড়িটি তার নিজের নামে। তিনি কয়রা উপজেলার জায়গীরমহল গ্রামের প্রয়াত আছতুল্যা গাইনের ছেলে।

দুদক সূত্র জানায়, পৈতৃকভাবে তেমন কোনো সম্পদের মালিক ছিলেন না শাহজাহান আলী। ছেলেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। নিজে চলাচল করেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা দামের গাড়িতে।

খুলনা মহানগরীর শিপইয়ার্ড এলাকায় আলতাফ হোসেন লেনে শাহজাহান আলীর নিজ নামীয় দোতলা বাড়িটি টুটপাড়া মৌজায় ০.০৪৯৫ একর জমির ওপর অবস্থিত। এ ছাড়া বানিয়া খামার মৌজার নিরালা আবাসিক এলাকায় ০.০৪৯৫ একর জমির ওপর ৬ তলা ভবন রয়েছে।

খুলনার গণপূর্ত বিভাগ-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত প্রকৌশলীরা দুদককে জানিয়েছেন, ওই ভবন দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭২ টাকা। এ ছাড়া জমি দুটি কিনতে তৎকালীন সময়ে শাহজাহান আলীর ব্যয় হয়েছিল ৮৯ হাজার ৪৫৬ টাকা। সে হিসাবে তার নামে স্থাবর সম্পত্তি আছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ২ হাজার ২২৮ টাকার। তবে শাহজাহান আলী দুদককে জানিয়েছিলেন, তার মোট স্থাবর সম্পত্তি র‍য়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫৬ টাকার। সে হিসাবে দুদকের কাছে তিনি ১ কোটি ১৩ লাখ ১২ হাজার ৭৭২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করেছিলেন।

এ ছাড়া এসব সম্পদ অর্জন করতে শাহজাহান আলী আইএফআইসি ব্যাংকের খুলনার সোনাডাঙ্গা শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। যা ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বকেয়া ছিল ৭৪ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৬ টাকা। এ হিসাবে স্থাবর সম্পত্তি থেকে ঋণ বাদে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হজার ৫৫২ টাকা।

দুদক সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান আলী ২০১৩-১৪ করবর্ষে খুলনার কর সার্কেল-০৬-তে আয়কর নথি খোলেন, যার টিআইএন ৩১৮৬২৫৭৫৮৮৭৪। তিনি ২০১৪-১৫ করবর্ষ থেকে ২০২০-২১ কর বর্ষ পর্যন্ত করযুক্ত আয় ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৮ টাকা, করমুক্ত আয় ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫৭৯ টাকা ও অন্যান্য আয় ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫১ টাকাসহ মোট ৫৩ লাখ ৯২ হাজার ৩২৮ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। আর ওই সময়ে তিনি পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ১৭ লাখ টাকা। সে মোতাবেক তার মোট আয় দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৯২ হাজার ৩২৮ টাকা।

তবে শাহজাহান আলী আয়কর নথি খোলার সময় প্রারম্ভিক সম্পদ দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭ টাকা। এ টাকার সঙ্গে তার মোট আয় দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫ টাকা। এর বিপরীতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫২ টাকা। এ হিসাবে তার অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ রয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ০৫ হাজার ১৭৭ টাকার।

দুদক বলছে, ১ কোটি ৩১ লাখ ১২ হাজার ৭৭২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও ১ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ১৭৭ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ দখলে রাখার অপরাধে শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। চাকরিজীবনে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদকের মামলা ও এজাহারের অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় শাহজাহান আলীর সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কল কেটে দেন। ১৩ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার ২৮ নম্বর সড়কে তার বাড়িতে গেলে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।