ঢাকা অফিস।।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নয়টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারন ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। আমরা চাই গণতন্ত্র।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার আগে সেখানে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। জনগণের আন্দোলনের সামনে সব স্বৈরাচারকেই নতি শিকার করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকেও করতে হবে।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, গত রাতে প্রায় সোয়া ৩টার দিকে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ তাদেরকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে- নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এত গভীর রাতে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে আসার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উসকানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ, র্যাব, সোয়াত বাহিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান একযোগে আক্রমণ করে অনেককে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজিরবিহীন।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভিতরে নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ওইগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘একই দিনে অফিসের ভেতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতাসহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেপ্তারকৃত অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা গ্রেপ্তারকৃত সব নেতাকর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় গণমাবেশের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে এখন গড়িমসি করে। আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীনভাবে ২৬ শর্তে গণমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল। যা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গত কারণে আমরা প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেওয়ার যে অনুরোধথ করেছি তা দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার বরাবর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করতে পুলিশ সম্মতি দেয়। অতএব, আগামীকাল শনিবার ঢাকা মহানগীরর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘আমরা তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সরকারি বাহিনীসমূহ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা গত প্রায় ১৫ দিন যাবত প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে সমাবেশ বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগসহ সব বিভাগের সব উপজেলা, জেলা ও মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই ও সমর্থনে চলছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় সরকারি দল হঠাৎ করেই মিছিল করছে আর আমাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, আমাদের এ গণসমাবেশ দুই মাস আগ থেকেই নির্ধারিত ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ার ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।