দাকোপে টোনাজালে মাছ শিকারে খালগুলো গভীরতা সংকটে

1

 

মোঃ জাহিদুর রহমান সোহাগ দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি।।

খুলনার দাকোপে বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ে আড়াআড়ি টোনাজাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে চলছে মাছ শিকার। এতে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্দকতা সৃষ্টির ফলে উপজেলার চড়া নদী, পূর্ব বাজুয়া, কচাসহ অসংখ্য খালের দিন দিন কমে আসছে গভীরতা। এছাড়া এলাকার বহু মানুষের আমিষের চাহিদা পূরনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কৃষি কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হতে পারে বলে এলাকার হাজারো কৃষক আশঙ্কা করছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূল ঘেঁষা এই উপজেলায় বিভিন্ন নামে ২২৮টি বেশি খাল ও জলাশয় রয়েছে। এসব অধিকাংশ সরকারী খাস খালগুলো নাম মাত্র ইজারা নিয়ে ইজারাদার অথবা গায়ের জোরে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দখলে রেখেছেন। তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আড়াআড়ি অবৈধ ভাবে বাঁধ, খন্ড খন্ড টোনাজাল, নেটজাল, পাটাজাল, চাকজাল, কারেন্ট জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। তাছাড়া খালের উপর গড়ে উঠেছে বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা এমনকি পাকা প্রচীরও। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ কৃষকের বীজতলা ও রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলেছে। আর শুকনো মৌসুমে খালে পানি ধারন ক্ষমতা না থাকায় সেচ সংকটের কারনে প্রধান অর্থকারি ফসল তরমুজ, রবি শস্য ও বোরো চাষ চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এসব কারনে এক সময়েকার জলাশয়ে ভরা এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি কৃষিকাজেও দেখা দিচ্ছে চরম বিপর্যয়। অন্যদিকে পলি মিশ্রিত পানি ঐ সব জালে বাধাগ্রস্থ হয়ে খালের গভীরতা দিন দিন কমে আসছে। এতে অসংখ্য দেশী প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। ফলে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১০৬টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরনেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য সিন্ধু রায় জানান, ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খালে আড়াআড়ি নেটপাটা এবং টোনাজাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে পানি সরবরাহের ব্যাপক প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে এবং পলি পড়ে দিন দিন খালের গভীরতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া শুকনো মৌসুমে খালের পানি সেচে ফেলে দিয়ে মাছ ধরে নেওয়ায় কৃষকরা সেচ সংকটে রবি শস্যসহ বোরো চাষ করতে পারে না। এমনকি রবি শস্য ক্ষেতেও সেচ দিতে পারে না। এতে কৃষি কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া অসংখ্য দেশী প্রজাতী মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। ফলে উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠির আমিষের চাহিদা পুরনে নেতিবাচক প্রভাবের আশংঙ্কা করছেন তিনি। অবিলম্বে বিভিন্ন খালের সকল জাল অপসারন এবং কৃষকের কথা বিবেচনা করে খালগুলো ইজারা বন্দের দাবি জানান তিনি।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, খালে আড়াআড়ি টোনাজাল পেতে রাখলে এবং পানি সরবরাহ সঠিক ভাবে না করলে দিন দিন গভীরতা কমে যাবে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং শুকনো মৌসুমে কৃষকরা সেচ সংকটে পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে কৃষি কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হতে পারে।

এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান বলেন, আগে একবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অনেক জাল বিনষ্ট করেছি। আগামী কয়েক দিন পর আবারও অভিযান পরিচালনা করে সব জাল তুলে ফেলবো।