সত্যিই কি শোনা যাচ্ছে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি?

4

ঢাকা অফিস||
বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে যেন এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। তবে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ সরকার প্রধান আশ্বস্ত করেছেন করে বলেছেন, সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কি নিজে থেকেই দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন নাকি সত্যিই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে? জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে জোরালো হবে খাদ্য সঙ্কট। বলা হচ্ছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ- ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং সাউথ সুদানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রবল। শুধু এশিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকা নয়, ইউরোপেও বাড়ছে সঙ্কট। কেন দুর্ভিক্ষ আসতে পারে তার কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছে ডব্লিউএফপি।
এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-
১. বলা হচ্ছে যুদ্ধ এবং নানা ধরণের সংঘাত খাদ্য ঘাটতির একটি বড় কারণ।
২. দ্বিতীয় কারণ জলবায়ুজনিত। পৃথিবীর অনেক দেশ হয়তো বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, নয়তো খরায় ভুগেছে। ফলে, কমেছে খাদ্য উৎপাদন।
৩. করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
৪. বেড়েছে সার ও ডিজেলের মতো কৃষি উপকরণের দাম।
৫. মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়াও খাদ্য ঘাটতির কারণ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে আছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা। বৈশ্বিক গম রফতানির ৩০ শতাংশই হয় দেশ দু’টি থেকে। আর সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশই যোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে খাদ্য বাণিজ্যে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে সরবরাহ সঙ্কট। আছে জ্বালানি সঙ্কট। সার ও কৃষিপণ্যের সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এফএও’র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকা ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ দক্ষিণ এশিয়ার৷ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ।
খাদ্য ঘাটতি থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের রক্ষাকবচ কৃষি- প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বারবার তা উঠে এসেছে। তবে, সেচের বাড়তি খরচ, সারের দাম এবং শ্রমিকের বাড়তি মজুরির কারণে এবার আমনের উৎপাদন খরচ ৩৯ শতাংশ বেড়েছে, বলছে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ইউরিয়া সার গড়ে ৬২৩ ডলারে কেনাবেচা হয়েছে। গতবছর যা ছিলো ৪৩৫ ডলার। বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত সারের ২৫ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া।
সঙ্কট আছে আরো। কম পরিশ্রমে বেশি লাভের ফসলের দিকে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। এতে ব্যক্তিগতভাবে সমৃদ্ধি হলেও সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার শঙ্কা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিলো তিন কোটি ১৩ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে তা চার কোটি ৪ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩ বছরে প্রবৃদ্ধি ২৯ শতাংশ। এ সময় ভুট্টায় প্রবৃদ্ধি এসেছে ৬৭১ শতাংশ।
এদিকে, পাকা ধানে মই দিতে পারে অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু সঙ্কটে অসময়ের বন্যা ও খরা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটালে বড় রকমের সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।
এফএও’র প্রতিবেদন বলছে, এ বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন কমবে দুই দশমিক এক শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের ধান, গম ও অন্যান্য দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমতে পারে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কমবে ধানের উৎপাদন- চার লাখ টন।