খুলনায় শুক্র-শনি বাস ধর্মঘট: বিপাকে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের চাকরিপ্রার্থীরা

5
Spread the love

 

শাহ তানভীর আহমেদ।।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দু’দিন খুলনায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর রাতে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ২২ অক্টোবর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

খুলনা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী এনায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও মহাসড়কে নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুদিন পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে সময় আরও বাড়তে পারে।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সে কারণে আমরাও কোনো গাড়ি চালাবো না।

অপরদিকে খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক কুদরতই-আমির এজাজ খান অভিযোগ করে বলেন, খুলনার বিভিন্ন উপজেলা এবং বিভাগের অন্যান্য ৯টি জেলা থেকে গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেজন্যে ১০ জেলার নেতা-কর্মীদের বিকল্পভাবে সমাবেশে আগেভাগে আসতে বলা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে আগামী ২২ অক্টোবর নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরের বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হবেই। সমাবেশ স্থলসহ সমস্ত খুলনা মহানগরী জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যে কোন পরিস্থিতিতে ২২ অক্টোবরের গণ সমাবেশ অবশ্যই সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যতই বাঁধা আসুক, জনউৎসাহ কোনক্রমেই ঠেকানো যাবেনা।

।। বিপাকে ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের চাকরিপ্রার্থীরা।।

খুলনা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদের চাকরির পরীক্ষা আজ শুক্রবার। কিন্তু আজ সকাল থেকে বন্ধ থাকবে খুলনার সব রুটের বাস চলাচল। এতে বিপাকে পড়েছেন সমাজকর্মী পদের ওই চাকরিপ্রার্থীরা।

জানা গেছে, ২২ অক্টোবর শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ। ওই সমাবেশ সামনে রেখে সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার ও সমাবেশের দিন শনিবার খুলনায় সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। যদিও সংগঠনটি বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়টি স্বীকার করতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ইজিবাইক বন্ধ রাখার দাবিতে ওই দুই দিন বাস চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। ২০২১ সালে দুবার ১৬তম গ্রেডের ওই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ আবার ২১ অক্টোবর শুক্রবার পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পরীক্ষায় খুলনা থেকে আবেদন করেছেন ১৩ হাজার ৩৭৬ জন। খুলনা শহরের ১৩টি কেন্দ্রে তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

প্রায় সাড়ে চার বছর আগে ওই চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন পাইকগাছা উপজেলার এনামুল হক। তিনি বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বিকেলেই সেখান থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এনামুল হক বলেন, ‘চার বছর আগে যখন চাকরির আবেদন করেছিলাম, তখন কেবল পড়াশোনা শেষ হয়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তারপরও শুক্রবার ওই চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুলনায় আসছি। ইচ্ছা ছিল রাতের গাড়িতে উঠে সকালে খুলনায় পৌঁছানো। তারপর পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার। কিন্তু সকাল থেকে খুলনায় সব গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে শুনে বিকেলেই ঢাকা থেকে বের হয়েছি। এখন খুলনায় কোনো আত্মীয়ের বাসা বা হোটেলে থাকতে হবে।’

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে এই পরীক্ষায় আবেদন করেছেন কমলেশ বৈরাগী। তিনি বলেন, ‘আমি ডুমুরিয়া থেকে খুলনা শহরে যাওয়ার জন্য বাস ব্যবহার করি। শুক্রবার বাস চলবে না। আবার আমারও পরীক্ষা হবে। এখন ২০ কিলোমিটার পথ আমার ইজিবাইক বা অন্য কোনো যানবাহনে যেতে হবে। অন্তত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শুক্রবার বাস না বন্ধ করলেও পারত।’

খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক খান মোতাহার হোসেন বলেন, একযোগে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এটা পূর্বঘোষিত। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু সকালে পরীক্ষা, তাই পরীক্ষার্থীরা হয়তো এক দিন আগেই বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই খুলনা শহরে চলে আসবেন। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের খুব বেশি সমস্যা হবে না।

খুলনা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৮টি রুটে প্রায় ১ হাজার ২০০টি বাস চলাচল করে।