পদ হারিয়ে শাম্মীকে দোষারোপ পঙ্কজের

5
Spread the love

ঢাকা অফিস।।
ক্ষমতাসীন দলের সব পদ হারানোর দুই দিন পর মুখ খুললেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। বলেছেন, শেখ হাসিনার কাছে তার নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে।

তার অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের প্রতি। তিনি ও পঙ্কজ একই নির্বাচনি এলাকার মানুষ। শাম্মী অবশ্য বলেছেন, পঙ্কজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
শাম্মীর বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা। তিনি ১৯৯১ সালে ওই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে জিতে সংসদ সদস্য হন। এর পরের অংশগ্রহণমূলক দুটি নির্বাচনে অবশ্য জেতে বিএনপি আর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে সেটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ।

আসন পুনরুদ্ধারের এই নায়ক ছিলেন পঙ্কজ নাথ। ২০১৮ সালে তিনি আবার মনোনয়ন পান। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন শাম্মীও।

দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে পঙ্কজ বলেন, ‘এখন আমার বিরুদ্ধে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে যা ইচ্ছা নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বলে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী (শাম্মী আহম্মেদ) আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা, মিথ্যা কথা আপাকে (শেখ হাসিনা) বলেছে। আমার অভিভাবক, আমার নেত্রী এসব বিষয় স্নেহের চোখেই দেখবেন।’

এই অভিযোগকে শাম্মী কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন পঙ্কজের অব্যাহতির বিষয়টিতে জড়ানো হচ্ছে? আমার এত ক্ষমতা হয়নি যে প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা কথা বলব।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। যে কারণে ওই এলাকায় আমি তিনবার গিয়েছিলাম। এ ছাড়া পঙ্কজের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তাকে অব্যাহতি দেয়াটা দলের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত।’

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে পঙ্কজের। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ইউনিয়নের ভোটাররা বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসাদের ভোট দেবে না। তাই আমাকে সাইজ করতে কৌশলে সরিয়েছে।

‘জেলা আওয়ামী লীগের যারা বিজ্ঞ লোকজন রয়েছে, তারাই আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে সরাতে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে। তারা সিনিয়র নেতা, কীসের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিল বুঝতে পারছি না।’

তবে এ ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের কার প্রতি অভিযোগ, সেটি স্পষ্ট করেননি পঙ্কজ।

তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের টানাপড়েন চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

পঙ্কজের বিরোধী পক্ষ ছিল বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুদার মোহাম্মদ ইউনুসের অনুসারীরা। দুই পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানিও ঘটেছে।

গত সোমবার পঙ্গজকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। একজন সংসদ সদস্যের দলীয় পদ হুট করে কেড়ে নেয়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই সেদিন বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। তবে পঙ্কজ সেদিন মুখ খোলেননি।

অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার পর সেদিন পঙ্কজের প্রতিক্রিয়া ছিল এমন, ‘দলের পাঠানো অব্যাহতির চিঠি আমি পেয়েছি। তবে এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’

দুদিন পর দলের কমিটিতে নিজের লোক বসানোর অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যে ব্যক্তি উল্লাস করেছিল, তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর জাতীয় পার্টিতে থাকাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে আসা ব্যক্তিকে সভাপতি করা হয়েছে। সেই রাজ্যে আমি কেমনে থাকব?’

হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে পঙ্কজ নাথের আধিপত্য থাকায় কোণঠাসা ছিল জেলা আওয়ামী লীগ অনুসারীরা।

তবে তিনি এখন বলছেন, ‘সেখানে কোনো সাংগঠনিক ক্ষমতা আমার নেই। আওয়ামী লীগের বিরোধী লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এমপি হওয়ার আগে আমি উপজেলা কমিটির সদস্য ছিলাম। এমপি হওয়ার পরে আমাকে উপদেষ্টা করে এক রকম কমিটি থেকে বাদই দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে উপদেষ্টা কমিটির কোনো মিটিং হয়নি। এখানে সাংগঠনিক ক্ষমতা তো আমার হাতে নেই, গ্রুপিংয়ের সুযোগও নেই।’

স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে প্রার্থী দেয়ার যে অভিযোগ আছে, সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন পঙ্কজ।

হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেয়া হলে পঙ্কজ নিজের অনুসারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করতেন বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল তার।

এর জবাবে পঙ্কজ বলেন, ‘হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একত্রিত হয়ে কট্টর বিএনপি করা লোকদের মনোনয়ন দিয়েছে। তা ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী তো তারাই দাঁড় করিয়েছেন। আমি কোনো প্রার্থী দাঁড় করাইনি। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচন করেছে তারা জয়ী হয়েছে। তৃণমূলে খোঁজ নিলেই সবকিছু টের পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি খুনোখুনির রাজনীতি কখনই প্রশ্রয় দিইনি আমার এলাকায়। বরং আমার এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থান থাকায় নিরীহ লোকজনকে হত্যা করেছে অশুভ শক্তি।’

সম্প্রতি মেহেন্দীগঞ্জ থানার পরিদর্শক ও পঙ্কজের মধ্যে ফোনে যে কথোপকথন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, সেটিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

ওই ফোনালাপে পঙ্কজ মেহেন্দীগঞ্জ পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খানকে কোপানোর কথা বলেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ অনুসারীরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাব আহম্মেদ পঙ্কজসহ দেশে থাকা হিন্দুদের নিকৃষ্ট বলে অভিহিত করেন।

পঙ্কজ বলেন, ‘মেহেদী নামের একজনকে মারধর করেছে মাদকাসক্ত রাতুল। পরে এলাকার লোকজন রাতুলকে মারধর করেছে। সেখানে আমার নাম জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হয়েছে। তখন একজনকে ফোন করে বলেছি, বাড়াবাড়ি না করতে। তখন রাগের মাথায় বলেছি।’