এশিয়া কাপ//শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শ্রীলঙ্কার

7
Spread the love

স্পোর্টস ডেস্ক।।
এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এবারের আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেল শ্রীলঙ্কা। অথচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে শোচনীয় হারের পর কেউ কল্পনাই করতে পারেনি ভারত-পাকিস্তানের মতো পরাশক্তিদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠবে লঙ্কানরা। এটি এশিয়া কাপে লঙ্কানদের ৬ষ্ঠ শিরোপা।
শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শ্রীলঙ্কার

 

দুবাইয়ে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৭১ রান তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ১৪৭ রানে। ফাইনালে লঙ্কানদের ম্যাচ জয়ের নায়ক ছিলেন দিলশান মাদুশান। একাই ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি।

পাকিস্তানের ব্যাটিং স্তম্ভ টপ অর্ডার। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের প্রায় ৯০ ভাগ কৃতিত্বই মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম ও ফখর জামানের। তবে এশিয়া কাপে এসে যেন রান খরায় ভুগছেন বাবর। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ৩০ রানেই আসরে তার সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে থাকল।

ফাইনালেও ফর্মহীন বাবর ফিরেছেন ৬ বলে ৫ রান করে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রমোদ মাদুশানের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালালেন বাবর আজম, ফাইন লেগে থাকা দিলশান মাদুশাঙ্কা লাফিয়ে সে বল নিজের তালুবন্দি করেন। অবাক চোখে তাকিয়ে সাজঘরে ফেরেন পাক অধিনায়ক।

টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটার ফখর জামানের অবস্থাটাও বাবরের মতো। গ্রুপ পর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে এক ফিফটি ছাড়া খুব একটা ব্যাট হাসেনি তার। ফাইনালেও দলের জন্য রাখতে পারলেন না কোনো ভূমিকা। উল্টো বাবরের পরের বলেই আউট হয়ে দলকে ফেলেন বিপদে। মাদুশানের বলে ফখর জামান ব্যাট চালিয়ে বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলেন, কী থেকে কী হয়ে গেল!

ওপেনার রিজওয়ান অবশ্য টপ অর্ডারের হাল একাই ধরে যাচ্ছেন আসরের শুরু থেকে। এদিনও তিনি হয়ে থাকলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের আস্থার প্রতীক। দলের প্রাথমিক চাপ সামলে নেন ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৯ বল মোকাবিলায় ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা।

সে জুটি ১৪তম ওভারে এসে ভাঙেন মাদুশান। তার স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন ইফতিখার। ৩১ বলে ২ চার ও এক ছক্কার মারে ৩২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৪০ বলে যখন ৭৮ রান প্রয়োজন তখন ক্রিজে আসেন হার্ড হিটার মোহাম্মদ নেওয়াজ। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মতো এদিন তিনি কোনো চমক দেখাতে পারেননি।

চামিকা করুনারত্নের শর্ট লেংথের স্লোয়ারে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন নেওয়াজ। ৯ বলে খেলেন এদিন তিনি করেন মাত্র ৬ রান। অন্যদিকে ক্রিজের একপ্রান্ত আগলে রেখে আসরে তৃতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে নেন রিজওয়ান।

তবে তার ব্যাটিং এদিন মোটেও টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। ম্যাচের হাল ধরলেও, অনেক বল খেয়ে দলকে ডুবিয়েছেনও তিনি। দলের জয়ের জন্য ২৪ বলে যখন ৬১ রান প্রয়োজন তখন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে। ৪ চার ও এক ছক্কার মারে ৪৯ বলে ৫৫ রান করে ফিরলেন রিজওয়ান। তাকে সাজঘরে ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এসে হাসারাঙ্গা পুরো ম্যাচের চিত্রই বদলে ফেলেন। রিজওয়ানের পর চার বলের ব্যবধানে খুশদিল শাহ (২) ও আসিফ আলিকে (০) ফিরিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন শ্রীলঙ্কা। ১৯ বলে পাকিস্তানের তখনও প্রয়োজন ৫৯ রান। হাতে তিন উইকেট থাকলেও শাদাব খান ছাড়া কার্যত আর কোনো ব্যাটার ছিল না ক্রিজে। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ১৪৭ রানে।

আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে ফিঞ্চকে বিদায়ী উপহার অস্ট্রেলিয়ার

এর আগে ভানুকা রাজাপাকসের ৪৫ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংসের পাশাপাশি হাসারাঙ্গার ২১ বলে ৩৬ রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করে ১৭০ রান।

শ্রীলঙ্কা শিবিরে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। প্রথম দুই বলে ওয়াইডসহ ২ রান দিলেও পরের বলেই দারুণ এক ইন-সুইঙ্গারে নাসিম উপড়ে ফেলেন কুশাল মেন্ডিসের স্টাম্প। ওই ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করেন তিনি। হাসনাইন পরের ওভারে দেন ১২ রান।

এক ওভার বিরতিতে আরও একটি উইকেট পড়ে শ্রীলঙ্কার। হারিস রউফের করা ওভারের দ্বিতীয় বলে লং অফে খেলতে গিয়ে ক্যাচ ‍তুলে দেন পাথুম নিসাঙ্কা। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ৮ রান করেন তিনি। পেছন দিকে দৌড়ে গিয়ে নিসাঙ্কার ক্যাচটি নেন পাকিস্তান দলপতি বাবর আজম। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ইন-সুইঙ্গারে দানুস্কা গুনাথিলাকার উইকেটও নেন হারিস।

শ্রীলঙ্কা দলকে অনেকটা একাই টানছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। পাওয়ার প্লে শেষে লঙ্কানরা যে ৪৭ রান করেছিল, সেখানে ডি সিলভারই ছিল ২৭ রান। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা সিলভা আউট হন ইনিংসের অষ্টম ওভারে। ইফতিখার আহমেদের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন তিনি। দাসুন শানাকা উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। শাদাব খানকে মেরে খেলতে গিয়ে বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন: ফাইনালে জিতলে কত টাকা পাবে চ্যাম্পিয়নরা?

৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা যখন ধুঁকছিল, তখন দলের হাল ধরেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও ভানুকা রাজাপাকসে। দুজনে মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। এর মধ্যে হাসারাঙ্গা একাই ২১ বলে করেন ৩৬ রান। সেই জুটি ভাঙেন হারিস। শেষ দিকে আরেকটা শক্ত জুটি দাঁড় করান রাজাপাকসে ও করুনারত্নে মিলে।

ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত তাদের জুটি থেকে আসে ৫৪ রান। ভানুকার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়ের মার দিয়ে। করুনারত্নে অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।