সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।
নামিদামি কোম্পানির ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও তার সহযোগীরা ভেলিণ্ডার মেশিনে সোয়াবিন তেল দিয়ে কৃত্রিম ননী তৈরি করে নকল দুধ তৈরি করে আসছিল। একইভাবে তারা ভারতীয় নিম্নমানের গুড়ো দুধে গ্লুকোজ মিশিয়ে ল্যাক্টোমিটারে ননীর মাত্রা ২৫ থেকে ২৮ দেখিয়ে বাজারজাত করতেন। এ কাজে তারা জেলি ব্যবহার করতেন। এমন অভিযোগের পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রশান্ত কুমার ঘোষকে তার বাড়ি থেকে আটক করে।
তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা নলতার কালিপদ ঘোষের ছেলে এবং তালা দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি। আটকের সময় প্রশান্ত কুমার ঘোষের কাছ থেকে এক হাজার ১২০ লিটার ভেজাল দুধ ও ২৫০ কেজি জেলি উদ্ধার করা হয়।
বিকেলে তাকে পাটকেলঘাটা সহকারি ভূমি কমিশনারের সামনে উপস্থিত করলে তিনি তার দোষ স্বীকার করায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
তালা উপজেলার জেয়ালা-নলতা গ্রামের সমীর ঘোষ, খগেন ঘোষ, সামছুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও তার সহযোগীরা ভেলিণ্ডার মেশিনে সোয়াবিন তেল দিয়ে কৃত্রিম ননী তৈরি করে নকল দুধ তৈরি করে আসছিল। একইভাবে তারা ভারতীয় নিম্নমানের গুড়ো দুধে গ্লুকোজ মিশিয়ে ল্যাক্টোমিটারে ননীর মাত্রা ২৫ থেকে ২৮ দেখিয়ে বাজারজাত করতেন। এ কাজে তারা জেলি ব্যবহার করতেন। অপদ্রব্য মিশ্রিত এ দুধ তারা খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন মিষ্টি তৈরির কারখানায়, প্রাণ, ব্র্যাক ও মিল্কভিটায় বিক্রি করতেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এ কাজের বৈধতা দিয়ে আসছিল। অবৈধ এ ব্যবসাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধুলিহরের দুগ্ধ ব্যবসায়ী তরুন কুমার সাহার সহযোগিতায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা সমবায় অফিসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে তালা দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি হন প্রশান্ত ঘোষ।
স্থানীয়রা আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সাতক্ষীরার পরিচালক নাজমুল হাসান ও তালা উপজেলার স্যানিটারী ইনসপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শরিফ মো. আব্দুল মতিন, জেলা স্যানিটারি ইনসপেক্টর রথীন্দ্রনাথ সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ তালা দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে ২৫০ কেজি জেলি ও প্রতি ক্যানে ৪০ লিটার করে ভেজাল দুধ ভর্তি ২৮টি ক্যানে ১১২০ লিটার ভেজাল দুধসহ প্রশান্ত ঘোষকে আটক করে। পরে তাকে পাটকেলঘাটা সহকারি ভূমি কমিশনার মো. রুহুল কুদ্দুসের সামনে হাজির করা হলে প্রশান্ত ঘোষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা , অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
তালা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, গ্রেপ্তারকৃত প্রশান্ত ঘোষকে মঙ্গলবার জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ভেজাল দুধ প্রস্তুতকারিরা আর্থিকভাবে অনেক স্বচ্ছল। তাই তাদেরকে কেবলমাত্র জরিমানা নয়, কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
