সরকার হটাতে রাজপথ দখলের আহবান মির্জা ফখরুলের

9

ঢাকা অফিস।।

সরকার হটাতে নেতা-কর্মীদের ‘রাজপথ দখলে’র প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, ”এই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, লড়াই শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে, এই লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে লক্ষা করবার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ আমাদেরকে দখল করতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট দানবীয় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা জনগনের সরকার, জনগনের রাষ্ট্র, জনগনের একটা সমাজ তৈরি করবো।”

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ”খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন আপনারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে, সরকার গঠন করতে হবে।”

 

আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ”আগামীকাল রোববার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। সেই সমাবেশগুলো আমরা করব। এরপর আগামী ২২ তারিখ থেকে সকল উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ব এবং সেই একই ভাবে প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব ইনশাল্লাহ।”

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের উদ্যোগে এই সমাবেশে হয়। সমাবেশের মঞ্চের ব্যানারে লেখা আছে- জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত নুরে আলম ও আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ।’

নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ টার পর। ফকিপুলের মোড় থেকে কাকারাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুনপাতের লাখো নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়া পল্টনের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ”আজকে চাল, ডাল, তেল সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে বিদ্যুতের যে সমস্যা সেটা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য আমার দেশে যে গ্যাস আছে সেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করে নাই। তাদের নিজস্ব লোকদের দিয়ে গ্যাস আমদানির ফলে আজকে বিদ্যুতের দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে তাদেরকে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। গত ৭ বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন আমাদের এই ৩০ বিলয়ন ডলার কোথা গেলো ? কারা নিয়ে গেলো? তা জনগন জানতে চায়।”

ছাত্র দল-যুব দলসহ নবীন সরকারের বিরোধী আন্দোলনে ‘জেগে’ উঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ”আজকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের তরুন সমাজ, যুব সমাজ তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। তাদেরকে আজকে নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের নিরাপত্তার স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের সমৃদ্ধির স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা হবে ন্যায় বিচার, সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার স্বাধীনতা। নতুন বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করব তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”

সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও বাধা প্রদানের অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ”এই স্বৈরাচারি, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে জনগনকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কথা আপনাদেরকে(নেতা-কর্মীদের) বলেছেন, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে প্রস্তুত বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো। এদেশে যখন গণতন্ত্র ছিলো না, তখন সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে। এরপর স্বৈরাচার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে বিএনপিকে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করতে হবে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ”আমি বলতে চাচ্ছি, গত তিন বছরে এদেশের ৫৪ হাজার কোটি টাকা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে পাচার করে দেয়া হয়েছে। এখনো লোডশেডিং চলছে, আমরা বিদ্যুত পাইনা। কিন্তু কুইক রেন্টালের টাকা বন্ধ নাই, ওদের টাকা দেয়া হচ্ছে। কার টাকা যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে কোনো খবর নাই। গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়েগ ৬ লক্ষ কোটি টাকা। এভাবে দেশটাকে আজকে আওয়ামী দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে। এই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ”আমাদের কোনো কথা নেই আমাদের দাবি একটাই- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে….। আমরা যখন রাস্তায় নেমেই গেছি। আমরা দাবি আদায় না করে যাবো না।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ”বাংলাদেশ আজ লন্ঠিত। এই দুর্নীতিবাজ সরকারের লুন্ঠন থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা এখন সর্ববৃহত রাজনৈতিক বিএনপির ওপর একটা ঈমানি দায়িত্ব। আমি নেতৃবৃন্দকে বলব, আপনারা সবাই মিলে এই লুন্ঠনকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাই।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, এজডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

দলের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, উলামা দলেরর নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আতাউর রহমার ঢালী, আবদুল কুদ্দুস, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সুপ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাশুকুর রহমান মাশুক, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুজ্জামান শিমুল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশীদ হাবিব সহ অঙ্গসংগঠন ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ উপলক্ষে নয়া পল্টনের সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ও সাদা পোষাকের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

দুপুর থেকে মিছিলে নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করছে নয়া পল্টনে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তার কারেণে কাকরাইল, শান্তিনগর,মালিবাগ, পুরানা পল্টন, আারামবাগসড়কসহ তার অলি-গলিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।