জমির জটিলতায় ঝুলছে পূর্ণাঙ্গ সুলতান কমপ্লেক্স

0

 

নড়াইল প্রতিনিধি।।

 

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের স্মৃতি রক্ষার্থে সুলতান কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জমির জটিলতায় তা আজও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ২ একর ৫৭ শতক জমির ওপর এটি নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও কমপ্লেক্স সংলগ্ন ৫ জমির মালিক ৭৮ শতক জমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় সরকার এ জমির মালিকানা পায়নি।

এ অবস্থায় এক প্রকার অরক্ষিত সুলতানের বিখ্যাত বজরাটি (নৌকা)। এর বিভিন্ন স্থানে কাঠ ঘুণে ধরেছে। কমপ্লেক্স সংলগ্ন চিত্রার তীরে যে স্থানে নৌকাটি রাখা হয়েছে, সে স্থানটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য নৌকার পাশে ২০১৮ সালে ‘সুলতান ঘাট’-এর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকায় কমপ্লেক্সে স্থান পাওয়া ছবিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ৭টি ছবি সংস্কার হলেও কাজের মান নিয়ে স্থানীয় শিল্পীদের অভিযোগ রয়েছে। শিল্পীর ছবিগুলোকে টেকসই করতে নতুন একটি চিত্র গ্যালারি নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা থমকে রয়েছে। শিল্পী সুলতানের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ‘শিশুস্বর্গ’ ভবনে শিশুদের জন্য ছবি আঁকার ব্যবস্থা করা হলেও তা বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ অবস্থায় আগামীকাল উদযাপিত হবে শিল্পীর ৯৯তম জন্মদিন। তিনি ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর শহরের কুরিগ্রামে তাঁর বাসভবন, শিশুদের ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান শিশুস্বর্গ, শিশুদের জন্য নির্মিত ইঞ্জিনচালিত নৌকা, সমাধিস্থল, শিল্পীর ব্যবহূত জিনিসপত্র ও তাঁর অঙ্কিত ছবি ঘিরে সুলতান কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। গণপূর্ত বিভাগ পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০১ সালে সুলতান কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০০৪ সালে শেষ করলেও এটি চালু হয় ২০০৬ সালে।

কমপ্লেক্সের ২ একর ৫৭ শতক জমির মধ্যে ১ একর ৫ শতক জমি শিল্পী সুলতানের। বাকি ১ একর ৫২ শতক জমি অধিগ্রহণ করা। এর মধ্যে প্রয়াত কলেজ শিক্ষক নওয়াব আলী, অধ্যাপক হাসান দেওয়ানসহ ৫ জন ২০০৩ সালে ৭৮ শতক জমির ক্ষতিপূরণ অবমূল্যায়নের মামলা করেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সুধী মহলের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় বৈঠক হলেও কোনো ফল আসেনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের দিকে জেলা প্রশাসন ও নড়াইলের সুধী মহলের উপস্থিতিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হলেও কোনো ফয়সালা হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক হাসান দেওয়ান জানান, জায়গাটি অধিগ্রহণ করার পর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আমাদের পৈতৃক ২৫ শতাংশ জমির কাগজপত্র সরকারের কাছে জমা দিই এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করি। পরে সরকার আর এটি গ্রহণ করেনি।

সুলতান কমপ্লেক্সের নতুন কিউরেটর ও শিল্পী সুলতানের ছাত্রী চিত্রশিল্পী তন্দ্রা মুখার্জি বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর শিশুস্বর্গে শিক্ষার্থী বেড়েছে। বর্তমানে ৩০-৩৫ জন ছবি আঁকার ক্লাস করছে। তিনি বলেন, সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে শিল্পীর নৌকার বেহাল দশা। সুলতান ঘাটটি নির্মাণ জরুরি। শিল্পীর ছবি আধুনিক ও পরিবেশসম্মতভাবে রাখতে নতুন গ্যালারি প্রয়োজন। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হলে কমপ্লেক্স পূর্ণতা পাবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সুলতান কমপ্লেক্স উপযুক্ত পরিবেশে শিল্পীর ছবি রাখতে নতুন চিত্র গ্যালারি, নৌকা সংরক্ষণ, সংস্কার, সুলতান ঘাট নির্মাণ, জমিসহসহ কমপ্লেক্সকে পরিপূর্ণ করতে ২ বছর আগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে ২০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি হাতে নেওয়া হয়েছে। এখনও এর বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

বছরে অল্প কিছু টাকা হাতে পেলেও আমরা কাজ শুরু করতে পারব। এ ছাড়া আর্থিকভাবে সুযোগ হলে শিশুস্বর্গের জন্য আরও একজন শিক্ষক নেওয়া হবে।