জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে খুলনা বেতার কেন্দ্রের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভাস্কর্য সংস্কার

19

 

নাজমুল হক লাকি||

জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে খুলনা বেতার কেন্দ্রে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি ভাস্কর্য সংস্কার করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেন খুলনা বেতার কেন্দ্র পরিদর্শনকালে জাতির পিতার পনের ফুট দৈর্ঘ্যের মূল ভাস্কর্যসহ বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য কমপ্লেক্সের মধ্যে আরও যে চারটি ছোট আকৃতির ভাস্কর্য রয়েছে, সেগুলোও সংস্কারের নির্দেশ দেন।

খুলনা বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক নিতাই কুমার ভট্টাচার্যের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সংস্কার কাজ এবং শোকের মাস আগস্টের শুরুতে তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কার করতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে বলে জানান শিল্পী বিধান চন্দ্র রায় ও প্রদ্যুৎ কুমার ভট্ট। সংস্কার কাজে হোয়াইট সিমেন্ট, গ্রে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার ক’রে, সূক্ষ্ম পরিশ্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্যের সংস্কারকাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। মূল ভাস্কর্য বেদীতে পিতলের যে ম্যুরাল রয়েছে সেগুলো কালো হয়ে গিয়েছিল, সেখানে আমরা কিছু ক্যামিকেল ব্যবহার করে আগের পরিস্কার, ঝকঝকে অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছি বলে জানান শিল্পীরা।

আঞ্চলিক পরিচালক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের আদলে নির্মিত এই শৈল্পিক ভাস্কর্যটি বাঙালির সাহস ও আত্মবিশ^াসের প্রতীক হয়ে খুলনা বেতারসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আলো ছড়াচ্ছে। এই ভাস্কর্যেই ৭ মার্চ ভাষণ দিবস, ১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন ও শিশু দিবস এবং ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান খুলনার সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে সচিব মহোদয়ের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য কমপ্লেক্সের সংস্কার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত বোধ করছি।

খুলনা বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী তাজুন নীহার বলেন, খুলনা বেতার কেন্দ্রে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য কমপ্লেক্স রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে আমরা সবসময়ই সচেষ্ট থাকি, কিন্তু এই অঞ্চলের লবণাক্ততার কারণে বঙ্গবন্ধুর মূল ভাস্কর্যের রঙে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল এবং ছোট দুই-একটি ভাষ্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সচিব মহোদয়ের নির্দেশের পর সেগুলো আমরা খুব ভালভাবে সংস্কার করেছি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বেতারের সহযোগিতায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৮কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। মূল নকশা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিল্পী লিটন পাল রনি। আর পরামর্শক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ড. মুকুল কুমার বাড়ৈ।

ছয় ফুট ফাউন্ডেশনের উপরে পনের ফুট দৈর্ঘ্যের ভাস্কর্যটিতে বিশ্বখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। ফাউন্ডেশনের বাম দিকে জাতীয় চার নেতা ও ডান দিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের প্রতিচ্ছবি প্রস্ফুটিত হয়েছে নান্দনিকভাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ৭ মার্চে উপস্থিত জনতার মুখচ্ছবিও প্রতিফলিত হয়েছে।

সমগ্র ভাস্কর্যটির ব্যাকগ্রাউন্ডে রয়েছে তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণকালের শৈল্পিক নিদর্শন। সবমিলিয়ে খুলনা বেতার কেন্দ্রের ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য কমপ্লেক্স’ জাতির পিতার ঐতিহাসিক সব মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে দেবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।