মাগুরা প্রতিনিধি।।
বেলের খোসাও আর ফেলনা নয়। এটা এখন অর্থকরী পণ্য। বেলের খোসা থেকে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন মালা। এই ‘বেল মালা’র সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ মালা তৈরি করে ভাগ্য বদল করেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নিভৃত পল্লির প্রায় অর্ধশত পরিবার।
মহম্মদপুরের বাবুখালী ইউনিয়নের বৃহষনগর এবং চরসেলামাতপুর গ্রামের এসব পরিবারের সদস্যদের নিপুণ হাতে তৈরি মালা তাঁদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে। এ দুই গ্রামের সন্ধ্যা বিশ্বাস, তৃপ্তি বিশ্বাস, দুর্গা রায়, ঊষা বিশ্বাস, মিনু বিশ্বাসসহ অনেকের তৈরি আকর্ষণীয় ও বাহারি মালায় সাজছে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের মানুষ। শুধু গৃহিণী নন, এখানকার গৃহকর্তা ও তাঁদের ছেলেমেয়েও এসব মালা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত।
তাঁদেরই একজন রিম্পা রায়, বয়স ১৩ বছর। পিতা-মাতার কাছ থেকে সে রপ্ত করেছে বেল মালা তৈরি। সে ধুলজোড়া-চূড়ারগাতী পিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এবং বৃহষনগর গ্রামের রমেশ রায়ের মেয়ে। একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র এবং চরসেলামাতপুর গ্রামের বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের ছেলে পার্থ বিশ্বাসও এ মালা তৈরিতে বেশ পারদর্শী।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুই গ্রামের স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও তাদের বাবা-মা বেল মালা তৈরিতে ব্যস্ত। চলছে আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া মালা তৈরির কর্মযজ্ঞ। স্থানীয় আজিবুর রহমান জানান, মাগুরা, নড়াইল, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাঁচা বেল ও বেলের খোসা নামমাত্র মূল্যে কিনে আনেন তিনি। ৩০০টি বেলের খোসা কেনেন ৪০০ টাকায়। সেগুলো প্রক্রিয়ার পর মালা তৈরি করা হয়। বেল মালার সঙ্গে পুতি বসিয়ে সেগুলোকে নজরকাড়া ডিজাইনে রূপ দেওয়া হয়। একটি মালা তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা। স্থানীয় বাজার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে একেকটি মালা বিক্রি করা হয়।
এসব মালা ঢাকার একটি ফ্যাশন হাউসের মাধ্যমে চলে যায় ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশে। এখানকার এসব মালা রাজধানীর ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠান স্থানীয় মহাজন কালীপদ বিশ্বাস। তিনি প্রতিটি মালা কেনেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। তিনি অনেক আগে থেকেই এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় পাঠাতেন। কয়েক বছর হলো ঢাকার ওই প্রতিষ্ঠান এসব মালা রপ্তানি করছে।
চরসেলামাতপুর গ্রামের তৃপ্তি বিশ্বাস বলেন, তাঁদের মালার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিক্রি করতে বাইরে যেতে হয় না। কালীপদ বিশ্বাস কিনে নিয়ে ঢাকায় পাঠান। এ মালা তৈরি ও বিক্রি করে তাঁরা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন। কালীপদ বিশ্বাস বলেন, দেশের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি বিদেশেও এখানকার বেল মালার বিরাট কদর। আশানুরূপ দামও পাওয়া যায়।
মাগুরা জেলা শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও বেশি দক্ষ হিসেবে তৈরি করার পাশাপাশি হস্তশিল্পের উন্নয়নে তাঁদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহম্মদপুরের ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, ‘বেল মালা তৈরির গল্প শুনেছি। এক দিন পরিদর্শনে যাব। প্রয়োজনে তাঁদেরকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।’