স্টাফ রিপোর্টার।।
বৃষ্টির ভরা মৌসুমেও পানির জন্য হাহাকার চলছে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধান চাষ ও পাট পচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। হাতেগোনা দু একজন কৃষক সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করলেও পানির অভাবে তা মরে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৭৫৫ হেক্টর জমিতে পাটচাষ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে পানির অভাবে এক হেক্টর জমিতেও ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষকরা। ভরা বর্ষা মৌসুমেও এসব এলাকায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষক ধান রোপণ করতে পারছে না।
এবার পাটচাষেও ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে। প্রচণ্ড রোদে পাট গাছের কচি পাতা পুড়ে গেছে। পাট পচানোর জন্য ডোবা, জলাশয় ও পুকুর খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষকরা।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের কৃষক আলামিন, নিতিশ গোলদার ও সালেক ঢালী জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে কৃষক আমন চাষে নামেন। এ কারণে এ আবাদে তাদের সেচ খরচ কম হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে (আষাঢ় ও শ্রাবণ) বৃষ্টির দেখা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পানির জন্য হাহাকার চলছে। বৃষ্টির অভাবে তারা এখনো আমনের চারা রোপণ করতে পারেননি। তবে গত দুদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতে তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাই তারা আমন আবাদে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষক মজিদ গাজী বলেন, এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করবেন। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না।
দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, দাকোপে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর। এরমধ্যে আমন চাষ হয় ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। দাকোপের অনেক এলাকায় আমন চাষের সঙ্গে জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। আকাশের দিকে চেয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে অনেক কৃষক আমনের বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন। তবে শ্রাবণে এসে আবারও বৃষ্টি কমে যাওয়ায় শঙ্কিত তারা। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় বীজতলায় পড়ে আছে রোপণ উপযুক্ত বীজ।
উপজেলার আনন্দ নগর গ্রামের আমন চাষি মো. ছিদ্দিক মোল্লা বলেন, আমন ধানের চাষ পুরোটাই নির্ভর করে বৃষ্টির ওপর। কিছুটা বৃষ্টি হওয়ার পর মধ্য আষাঢ় থেকে বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু এবার শ্রাবণেও বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার খলিশা গ্রামের আমন চাষি রমেশ মণ্ডল, মনোরঞ্জন মণ্ডল ও বিধান মণ্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় এখানকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। আমাদের উপজেলার বেশিরভাগ জমি এক ফসলি। আমন মৌসুমে আমন ধান চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হন। কিন্ত এ বছর আমন মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের ধান চাষে অনেক বিলম্ব হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বেশি লবণ কাটে, যা সেচের পানিতে কাটে না।’
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, শুধু ডুমুরিয়াতে নয়; প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে সারা দেশে আমন আবাদে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আমন মৌসুমের ধান রোপণের সময় খুব বেশি পিছিয়ে যায়নি। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। এ বৃষ্টিতেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমন আবাদ নিয়ে কৃষকের পাশাপাশি কৃষি অফিসও চিন্তায় রয়েছে। চলতি মাসে বৃষ্টি হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এরই মধ্যে কৃষক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেছে।
দাকোপের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপজেলায় ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে বর্তমানে এ এলাকায় অনাবৃষ্টির কারণে মাত্র ৪০ ভাগ জমিতে বিজতলা প্রস্তুত হয়েছে। ২০ ভাগ জমি চাষের আওতায় এসেছে। যদি দু এক সপ্তাহের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূলে না আসে তাহলে উপজেলায় আমন চাষিরা তাদের বিজতলা তৈরি এবং জমি চাষের ক্ষেত্রে অনেক পেছনে পড়ে যাবেন।
তিনি বলেন, আরও আগে বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। জুলাইয়ের প্রথম দিকে ভারী বৃষ্টি হয়। ওই বৃষ্টি আরও কয়েকদিন আগে হলে আমন চাষিদের অনেক সুবিধা হতো। এই বৃষ্টি চলমান থাকলে আমনের বীজতলা ও জমি তৈরির কাজ এগিয়ে যেতো।