স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট।।
বাগেরহাটে নিয়োগ প্রদানের শর্তে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ নানা অভিযোগে খানপুর ইসলামীয়া আলিম মাদরাসার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। ঘুষ গ্রহন ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে রবিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে লিখিত পরীক্ষার পরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মোঃ শহিদ লতিফ। টাকা নেওয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদারের প্রত্যাহার ও বিচার দাবি করেছেন নিয়োগ প্রত্যাশী ও স্থানীয়রা।
মাদরাসা সূত্রে জানাযায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, অফিসসহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিসসহকারী, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য ছিল। সম্প্রতি শূন্য থাকা ৫টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি আহবান করে কর্তৃপক্ষ। ৫টি পদের বিপরীতে ৭২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সব প্রক্রিয়া শেষে শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে রামপাল উপজেলার শারাফপুর আলিয়া মাদরাসায় নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল। নিয়োগ প্রদানের শর্তে টাকা দেওয়া প্রার্থীদের অভিভাবকরা মাদরাসার সামনে জড় হয়। নিজেদের প্রার্থীদের চাকুরী পাওয়া নিয়ে শঙ্কা হওয়ায় হট্টগোল করেন তারা। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি জেলা প্রশাসন , উপজেলা প্রশাসন ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মোঃ শহিদ লতিফকে জানান।
ষ্টাম্পে চুক্তি করে মাদরাসার সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদারকে টাকা দেওয়া মোঃ মীর মোশারফ হোসেন বলেন, আমার ছেলে মীর মুকিত মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেনীর (নিরাপত্তা প্রহরী) নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল। মাদরাসার সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদারের সাথে একশত টাকার ষ্টাম্পে চুক্তির মাধ্যমে দুই ধাপে তাকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করি। কিন্তু নিয়োগের দিন দেখি আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদার। গোয়ালের গরু বিক্রি করে এই টাকা দিয়েছি, চাকুরী না হলে আমরা কি খাব, এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই কৃষক।
শুধু মীর মুকিতই নয়, অন্তত ১৭ জন প্রার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অংকে টাকা নিয়েছেন সভাপতি এমন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয় এটা সবাই জানে। কিন্তু এই মাদরাসার সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় নিয়োগ স্থগিতের মত সমস্যা তৈরি হয়েছে।
খানপুর ইউনিয়নের ৭ নং (দক্ষিন খানপুর) ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ কামাল তরফদার বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার মাদরাসার নিয়োগ পরীক্ষা রামপাল উপজেলার মধ্যে নেওয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় এই নিয়োগ পরীক্ষায় দূর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। শুধু মীর মোশারফের ছেলে নয় আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সভাপতি। এর আগেও কয়েকজনের কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে টাকা নিয়েছে এই সভাপতি।
মাদরাসার সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম তরফদার বলেন, শুধু একজনের কাছ থেকে চুক্তি করে টাকা নেওয়া হয়েছে। চাকুরী না হলে আমরা টাকা ফেরত দিব। যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে এখন অপেক্ষা করতে হবে।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করে ছিলাম। এখানে আমার কোন অপরাধ বা অনিয়ম নেই। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, সে দায়ভার তার নিজের নিতে হবে। সে দায়ভার আমি নিব না।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মোঃ শহিদ লতিফ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ ওঠায় আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছি। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। টাকা গ্রহন ও অনিয়মের বিষয়ে মাদরাসার সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগ প্রত্যাশীদের নোটিশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) উভয় পক্ষের শুনানীর মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের মহা পরিচালক বরাবর পাঠানো হবে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।