ভ্যান হারিয়ে কান্না থামছে না কিশোর দিপ্ত‘র

3

 

স্টাফ রিপোটার, বাগেরহাট।।

স্কুল বন্ধ, অতিরিক্ত আয়ের জন্য বাবার ভ্যান চালাতে বের হয়েছিলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিপ্ত মৃধা (১৪)। সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে যাত্রীদের অনুরোধে ভ্যান থামিয়ে পান আনতে গেলে, কৌশলে দিপ্তর ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় যাত্রীবেশী চোরেরা। খোজাখুজি করে আর ভ্যান না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিশু দিপ্ত, তার চারপাশে জড় হয় স্থানীয়রা। তাদের আশ্বাসে কান্না থামছে না দিপ্ত‘র।

ছোট আন্ধারমানিক গ্রামের দিপঙ্কর মৃধার ছেলে দিপ্ত বলেন, সকালে বাড়ির সামনে থেকে দুই যাত্রী নিয়ে কচুয়া বাজারে আসি। সেখানে এক যাত্রী নেমে গেলেও অন্য জন আমাকে সাইনবোর্ড বাজারে নিয়ে আসেন। সাইনবোর্ড বাজারে ওই যাত্রীকে নামিয়ে কচুয়া ফিরে যাচ্ছিলাম। এসময় সাইনবোর্ড মোড় থেকে এক যাত্রী ওঠে আমার ভ্যানে। সে আমাকে জোর করে বাগেরহাট নিয়ে আসে। ওই যাত্রী ফোন করে পথ থেকে আরও একযাত্রীকে উঠায় আমার ভ্যানে। আমি বাগেরহাটে আসতে চাইছিলাম না। কিন্তু মাল নিবে বলে আমাকে জোর করে এবং তারা বলেছিল আমরা তোমার বাবাকে চিনি। বাগেরহাট শহরের মধ্যে ঘুরে তারা পাইপ নিবে বলে প্রথমে এক দোকানের সামনে দাড়ায়। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে মিঠাপুকুর পাড় আসে। সেখানে দাড়াতে বলে তারা ভ্যানে বসেই আমাকে পান নিয়ে আসতে বলে। ‘আমি ভ্যানে তালা দিয়ে গেলেও পান কিনে পেছনে ফিরে দেখি ভ্যান সেখানে নেই। তারপর আমি সব দিকে দৌড়াইছি। কিন্তু ওই লোকদের কোথাও পাইনা, ভ্যানও পাইনা। তারা আমার ভ্যান নিয়ে পালিয়েছে। এখন কি করব, বাবা আমাকে কি বলবে এই বলে কাঁদতে থাকেন শিশু দিপ্ত।

দিপ্ত আরও বলেন, কয়দিন আগে কিস্তি (এনজিও‘র ঋণ) তুলে এই ভ্যানটি বানিয়েছে বাবা। এখনও কিস্তি শেষ হয়নি। এরসাথে সুদের দেনা রয়েছে। এখন কি করব আমরা। দু’বছর আগেও বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে আমার বাবার একটি ভ্যান চুরি হয়েছিল। সেই ভ্যানটি আমরা আর পাইনি। তারপর অনেক কষ্টে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই ভ্যানটি কিনেছিল বাবা। এই ভ্যানটাও চুরি হয়ে গেল।

মিঠাপুকুর পাড় এলাকার একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী তারক বৈরাগী বলেন, ছেলে টারে দেহি কানতি কানতি এই খানে আইসে দিয়ালের সাথে মাথা টাহাইতেছে। এর আরে ভ্যান গেল কয়ে কানতি কানতি দৌড়তিল। পরে আমরা ডাইকে ওর কাছ তে নাম্বার নিয়ে ওর বাবারে ফোন করছি।

দিপ্তর পিতা দিপঙ্কর মৃধা দুপুরে বাগেরহাটে এসে সদর মডেল থানা এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

দিপঙ্কর মৃধা বলেন, শরীরটা খুব বেশি ভালনা আমার। তাই অভাবের তারণায় ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম ভ্যান চালাতে। কিছু টাকার জন্য আমার পুরো ভ্যানটিই গেল। এখন কিভাবে সংসার চলবে জানি না।

বাগেরহাট মডেল থানার ওসি কেএম আজিজুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভ্যানটি খুজে বের করতে পুলিশ সৎপর রয়েছে। এই চোর চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এরআগে গত ১৫ জুন বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি ইজিবাইক চুরি হয়। যাত্রীবেশী চোরেরা সেবার চালক আবু বক্কর আয়াজকে (২৪) অচেতন করে তার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকটি চুরি করে নিয়ে যায়। রামপাল উপজেলার বাইনতলা এলাকার আয়াজ ঘটনার মাত্র একমাস আগে নিজেদের গরু বিক্রির টাকা এবং ধার দেনা করা টাকা মিলিয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ইজিবাইকটি ক্রয় করে।

আয়াজ বলেন, এই গাড়ি কেনার ২২ হাজার টাকা এখনও বাকি। পরিশোধ করতে হবে। কোথায় টাকা পাব। এই গাড়ির আয় দিয়ে পরিবার চলত। এখন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ নেই।

এর বছর খানেক আগে বাগেরহাট শহরের পুরাতন জেল খানা মোড় এলাকায় এক শিশু ভ্যান চালককে নাস্তা আনতে পাঠিয়ে ভ্যান নিয়ে পালিয়েছিল দই যাত্রী। সেই ভ্যানটিও আর খুজে পাওয়া যায়নি।