ঢাকা অফিস।।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ায় তাকে এই ভর্ৎসনা করা হয়।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মো. রেজাউল করিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি একটি পক্ষ নিয়ে যে আচরণ করেছেন তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এরপর ইউএনও মো. রেজাউল করিম নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
তখন আদালত বলেন, আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আপনাকে ক্ষমা করলে আমরা আটকে যাব। আদালতের সমন নিয়ে নোটিশ জারিকারকরা আপনাদের কাছে গিয়েছিল। আপনার উচিত ছিল তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন!
আদালত আরও বলেন, আপনি ছোট একটা বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারেন না। কীভাবে জনসেবা করবেন? একটি কথা মনে রাখবেন, আইন-আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান। আপনি যদি আইন না মানেন আপনাকে কেউ মানবে না।
হাইকোর্ট ইউএনও রেজাউল করিমকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, আদালতের জারিকারকের সঙ্গে আপনাদের দুর্ব্যবহারের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। সাধারণ মানুষ কী ভাবছে জানেন? মানুষ ভাবছে বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে। এটা শোভনীয় নয়। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে।
আদালত আরও বলেন, আপনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করেছেন। আদালত অবমাননার ঘটনায় আদালতে আসতে হয়েছে আপনাকে। আপনার ক্যারিয়ারে একটি স্পট পড়ে গেল। আমরা যদি একটি লাইন রিখে দিই আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।
জানা গেছে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ‘ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ’ মামলাটি বিচারাধীন। এ মামলার নোটিশ জারির জন্য ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে নাজির উকিল মিয়াকে নোটিশ গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি নোটিশ গ্রহণ না করে ব্যস্ততার অজুহাত দেখান। এরপর বিকেল ৪টায় পুনরায় নাজিরের কাছে গেলে তাদেরকে ওপর তলায় গিয়ে বসতে বলেন।
এ সময় নোটিশ জারিকারকরা বলেন, তাদের অন্যত্র নোটিশ জারি করতে হবে। তখন উকিল মিয়া বলেন, তাতে তার কী, জজ কোর্টের নোটিশ না রাখলে তার কী হবে? তিনি এর চেয়ে বড় কাজে ব্যস্ত আছেন। তিনি নোটিশটি পাশের টেবিলে দিতে বলেন। কিন্তু পাশের টেবিলের দায়িত্বরত কর্মচারী নোটিশ বুঝে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ সময় জারিকারক মেহেদী হাসান নোটিশ জারি না করে চলে আসার জন্য কামাল হোসেনকে বলেন।
তখন উকিল মিয়া বলেন, জজের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা নির্বাহী বিভাগের লোক। নোটিশ না রাখলে আমাদের কিছু হবে না। তখন জারিকারক মেহেদী হাসান ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য পুনরায় কামাল হোসেনকে বললে নাজির উকিল মিয়া নোটিশ বুঝে নেন।
ওই সময় অফিসের একজন কর্মচারী বিষয়টি ইউএনওকে অবহিত করলে তিনি জারিকারকদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে জেরা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ইউএনও অফিসের স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের সাজা দেওয়ার হুমকি দেন।