যশোর প্রতিনিধি।।
চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদগ্ধের শিকার যশোরের মনিরামপুরের ফায়ারম্যান গাওসুল আজমের (২৪) মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
শনিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত সোয় ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ৮ দিন ধরে সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন গাওসুল। মৃত্যুর আগে মা আর ৬ মাসের ছেলেকে দেখার বড় আকুতি ছিল তার।
গাওসুল আজমের ভগ্নিপতি বিজিবি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, শনিবার (১১ জুন) দুপুরে চিকিৎসক একবার কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস (লাইফ সাপোর্ট) খুলে দেন। কিছুসময় থাকার পর আবার তাঁর কষ্ট বেড়ে যায়। তখন চিকিৎসক এসে লাইফ সাপোর্ট পরিয়ে দেন। এরপর রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে আমাকে ডেকে দেন হাসপাতালের লোকজন। যেয়ে দেখি আমার ভাই আর নেই।
এদিকে রোববার (১২ জুন) সকালে গাওসুল আজমের মৃত্যুর খবর গাওসুল আজমের মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছুলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি ওই গ্রামের আজগার আলীর একমাত্র ছেলে। বাবা মা ছাড়াও তার ঘরে রয়েছে স্ত্রী ও ৬ মাসের শিশু ছেলে। সহায় সম্বল বিক্রি করে ও বন্ধক রেখে একমাত্র ছেলে গাওসুলকে চাকরি দেন আজগার আলী। এখন পরিবারের শেষ আশ্রয় হারিয়ে ফেলায় আজগার আলীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর কথা শুনে বারাবর মুর্ছা যাচ্ছেন মা আসিয়া বেগম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী কাকলী খাতুন। শোকে কাতর বাবা আজগার আলী।
দুপুরে হাসপাতালের মর্গে থেকে গাওসুলের মরদেহ নেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর ঢাকার সিদ্দিক বাজারে। সেখানে প্রথম জানাজা হয়ে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাঁর মরদেহ নিয়ে মনিরামপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন স্বজনরা।
গাওসুল আজমের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান গতকাল বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাত ১০টার দিকে আমরা মরদেহ নিয়ে মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙায় পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি। গ্রামে কবর খোঁড়াসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাতেই দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে গাওসুলের দাফন সম্পন্ন হবে। মিজানুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে শনিবার (৪ জুন) রাতে অগ্নিদগ্ধ গাওসুলকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে আনা হয়। শরীরের ৭০ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় সেখানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শুরু থেকে আমি তার সাথে হাসপাতালে ছিলাম। হাসপাতালে মোট পাঁচ বার অস্পষ্ট কথা বলেছেন গাওসুল। শুক্রবার (১০জুন) দুপুরে আমার সাথে শেষ কথা হয়। প্রথমে বাবা আজগার আলীর সাথে কথা বলতে চান তিনি। বাবার সাথে কথা শেষে বৃদ্ধা মা আসিয়া বেগম ও ৬ মাসের শিশু ছেলে সিয়াম কেমন আছেন জানতে চান।
গাউছুলের মামাতো ভাই রমজান আলী বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে বাড়ির কারও চোখে ঘুম নেই। সবাই দুশ্চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভোর ৪টার দিকে খবর আসে, ভাই মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন গাউছুল ভাই। মামার চাষের জমিও নেই। কীভাবে যে এখন তাদের সংসার চলবে, আল্লাহ জানেন।
মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রনব কুমার বলেন, আমাকে সদর দপ্তর থেকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা গাওসুলের মরদেহ গ্রহণসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তুত আছি।
২০১৬ সালে খাটুয়াডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন গাওসুল আজম। এরপর একই ইউনিয়নের কাজীয়াড়া গ্রামের কাকলী খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি। ছয়মাসের প্রেষনে (ডেপুটেশন) পাঁচ মাস আগে গাওসুল যোগ দেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার ষ্টেশনে। গত সপ্তাহের শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহকর্মীদের সাথে সর্ব প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাওসুল আজম। সেখানে অগ্নিদগ্ধ হলে রাতে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।