ঢাকা অফিস।।
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মাণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং অপমানের প্রতিশোধ। এই সেতু শুধু সেতু নয়, এটি প্রকৌশলজগতে এক বিস্ময়। বুধবার জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নিয়ে আনা একটি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে এ প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি সংসদে আনেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করার পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে বিপুল লুটপাট হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে বিএনপির সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন) রুমিন ফারহানা বলেছেন, এই সেতু দুর্নীতির ‘টেক্সটবুক এক্সাম্পল’ (পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ) হয়ে থাকবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবেন। তখন অনেকে অবাক হয়েছিল। আজ পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু কেউ প্রধানমন্ত্রীকে থামাতে পারেননি। রুমিনের বক্তব্যের পরপরই বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ। রুমিনের বক্তব্য শুনে খুব অবাক হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে ঠিক আছে। সংসদ সদস্য হলেও রুমিন কনিষ্ঠ। এ কারণে রুমিনের বক্তব্যের জবাব দেওয়া তাঁর সাজে না। যারা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অবরোধের ভয় দেখাচ্ছে।
তারা র্যাবের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। মানবাধিকারের কথা বলে একটি স্বাধীন দেশের সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার তাদের কেউ দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায়। পদ্মা সেতু কেবল সেতু নয়, এটি প্রকৌশলজগতের বিস্ময় বলে বর্ণনা করেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, এই সেতুর পাইল বিশ্বের গভীরতম। সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম হ্যামার ব্যবহার করা হয়েছে এই সেতু নির্মাণে। পদ্মা সেতুকে সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসেরর প্রতীক এবং অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছেন, আমরা বীরের জাতি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি এখনো চান এই সেতুর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে হোক।
কিন্তু সেটা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে গানের কলি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম থেকে যাবে…।’ এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন। জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের প্রশ্ন করা উচিত তারা যে ক্ষতি করেছে, তা কীভাবে পুষিয়ে দেবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন যেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা যেন নাকে খত দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যান, সেটা দেখার জন্য বেঁচে আছেন বলে জানান মতিয়া চৌধুরী। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একদিন বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিশ্বাস করতে পারেননি বাংলা স্বাধীন হবে। বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন বাঙালি সব করতে পারে। আজ তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখালেন। পদ্মা সেতুর বিরোধিতা যারা করেছে, তারা এখন প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কিছু মহলের প্রতিহিংসাপরায়ণতা এখনো প্রশমিত হয়নি। বক্তব্যের একপর্যায়ে ড. ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘জনমনে প্রশ্ন আছে সীমিত আয়ের একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হয়েও ড. ইউনূস বিশাল অঙ্কের অর্থ ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান হিসেবে দিলেন কীভাবে? এ রকম আরও বহু প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের জবাবও নিশ্চয়ই একদিন পাওয়া যাবে।’ অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ফারুক খান, আ স ম ফিরোজ, আবদুল্লাহ আল ইসলাম, আবদুস সোবহান, কাজী নাবিল আহমেদ, ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, শেখ তন্ময়, শাজাহান খান, আ ফ ম রুহুল হক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মৃণাল কান্তি দাস, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, সৈয়দ আবু হোসেন ও তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
সংসদ সদস্যদের মধ্যে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ছোটরা বেদয়াদবি করলে বোঝাতে হয়, না বুঝলে চটকানা দিতে হয়।’ তিনি রুমিনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (বাদ দেওয়া) করার দাবি জানান। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, যাদের গা চুলকানি আছে তারা যেন পদ্মা সেতুতে না ওঠে। তারা যেন নৌপথে পার হয়, ডুবে ডুবে মরে-এটাই হোক জনগণের ঐকান্তিক কামনা।