খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
কাঠখড়, ঘাত-প্রতিঘাত, গুজব, আরও কত বাধা, সব পেরিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বহুকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। তবে স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণে সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক বাধার। পদ্মা সেতু নির্মাণে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে দায়ী করা হয়। এক্ষেত্রে সব থেকে বেশি দোষারোপ করা হয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও পশ্চিমা বিশ্বকে। এছাড়া দেশীয় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে সরকারি দল বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছে। এ দিকে ২৪ মে ঘোষণা আসে আগামী ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই ঘোষণার পরে ৪ মে শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও, ঘটনার একদিন পর নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৪১ বলে দাবি করে প্রশাসন।
এই ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন বহু মানুষ। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এরফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে। আগুন লাগার ৪৮ ঘণ্টা পরেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি কারণ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিকের উপস্থিতি। এরফলে উদ্ধার অভিযান শেষ হচ্ছে না।
এদিকে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের আকাশ-বাতাস। খালি চোখে এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও এই দুর্ঘটার কারণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। এমনকি খোদ ডিপোর মালিকক্ষই এটিকে নাশকতা হিসেবে দাবি করেছেন। বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করে বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ডিপোতে আট থেকে নয়শ’ কনটেইনার ছিল। কোনোটাই বিস্ফোরিত হয়নি। একটা কনটেইনারে কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট।’ সোমবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে তিনি এমন দাবি করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিপো থেকে কোনও কনটেইনার বের করতে কিংবা প্রবেশ করাতে কাস্টমসের অনুমতি নিতে হয়। এখানে যদি কোনও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ থেকে থাকে তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানার কথা।
এদিকে এরকম একটি সুরক্ষিত জায়গায় হঠাৎ করে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যেও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেকের মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে যে, সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর এই ঘটনাটি নিছকই দুর্ঘটনা নাকি কোনো নাশকতা। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরপরই এত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, নানা উন্নয়নের কথা বারবার বলেছে সরকার। তবে আমরা দেখছি সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এই অগ্নিকাণ্ড প্রমাণ করে তারা কত মিথ্যা কথা বলেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পদ্মার সেতু দেশের মানুষের একটি গৌরবের বিষয়। দেশের মানুষের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিতে বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্নকে পূরণ করে দেখিয়েছেন।
যখন ষড়যন্ত্র করেও পদ্মা সেতু তৈরি আটকানো যায়নি, তখন সেটির উদ্বোধনকে ঘিরে মানুষের আনন্দ উৎসবকে কিভাবে ভেস্তে দেয়া যায় তার একটি পরিকল্পনা চালাচ্ছে সেই মহল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সীতাকুণ্ডের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
আগামী ২৫ জুন পদ্মার সেতুর উদ্বোধন। এই উদ্বোধনকে ঘিরে পুরো জাতি একটি উৎসবের আমেজে সেজেছে। এর আগেই এই ধরনের একটি বড় ঘটনায় জাতি মর্মাহত। এই অবস্থায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খুশিতে যে অনেকটা ভাটা পড়লো এটা বলাই যায়। আর নাশকতাকারীরা এমনটিই চেয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
মূলত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব ভেসে দিতে এই ধরণের ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও কিভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানতে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সীতাকুণ্ডের এই অগ্নি দুর্ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই দেশের মানুষকে শোকগ্রস্ত করেছে। এরফলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খুশির মাত্রায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।