ঢাকা অফিস।।
করোনার কারণে দীর্ঘ ২৬ মাস বন্ধ থাকার পর বেনাপোল রেলস্টেশনের মাটি স্পর্শ করল খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন। রোববার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সাইরেন বাজিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ট্রেনটি।
এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে বরণ করতে বেনাপোল রেলস্টেশনে উপস্থিত ছিল কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বন্দর এবং রেলওয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধ থাকে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন।
মাত্র ১৯ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ছেড়ে আসে খুলনার উদ্দেশে। তবে সামনের দিনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছে ভারতীয় রেলওয়ে কতৃপক্ষ।
এদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে রোববার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ট্রেনটিতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৭০টি। এর মধ্যে ভারতীয় যাত্রী ১৬ জন। ইন্দোনেশিয়ান ১ জন।
অন্যদিকে ১ জুন নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকার মধ্যে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেন চলাচল শুরু হবে। যা উভয় দেশের রেলপথ মন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।
কলকাতা থেকে খুলনার দূরত্ব ১৭২ কিলোমিটার। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন্ধন এক্সপ্রেসের খুলনায় এসে পৌঁছবে।
ট্রেনটি আবার আজই বেলা তিনটায় খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করবে। সন্ধ্যার দিকে ট্রেনটি কলকাতা স্টেশনে পৌঁছাবে।
কলকাতা থেকে বন্ধন এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার সময় স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় রেলের (পূর্ব) শিয়ালদহ বিভাগের সহকারী কমার্শিয়াল ম্যানেজার হরি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা থেকে খুলনা গন্তব্যের ক্ষেত্রে ট্রেনের এসি চেয়ারের ভাড়া ৮০০ রুপি। এসি এক্সিকিউটিভ শ্রেণির ভাড়া ১ হাজার ২০০ রুপি।
বন্ধন এক্সপ্রেস প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছাড়ে। আর একই দিন খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছাড়ে বেলা তিনটায়। ট্রেনটির ট্রিপ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রোববার মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, দীর্ঘ ২৬ মাস পর দুদেশের মধ্যে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। করোনার কারণে এতদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে যাত্রীদেরও বেশ অসুবিধা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া সাশ্রয়, নিরাপদ। আর্থিকভাবে আমাদের প্রচুর লস হয়েছে। কারণ, দুদেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলে বাংলাদে প্রায় ৭৫ শতাংশের বেশী ভাড়া পায়। তিনি বলেন, এখন থেকে মৈত্রী ট্রেনটি সপ্তাহে পাঁচ দিন চলাচল করবে। এতে আসন রয়েছে ৪৫৬টি।
দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, মৈত্রী এখান থেকে সরাসরি সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশনে পৌঁছাবে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। ওখানে ২০ মিনিট যাত্রা বিরতির পর দুপুর ২টায় সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতার উদ্দেশে ছুটবে মৈত্রী। মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছেড়ে বিকাল ৪টায় কলকাতা স্টেশনে পৌঁছাবে।
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাত্রা শুরু করেছিল যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস। সে সময় দুই দেশের সীমান্তবর্তী দর্শনা ও গেদে রেলস্টেশনে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন-কাস্টমস করা হতো। এর পর যাত্রীদের যাত্রাসময় কমানোর জন্য দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সীমান্তবর্তী স্টেশন দর্শনা ও গেদের পরিবর্তে স্ট্যাটিং পয়েন্ট অর্থাৎ ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ও কলকাতার চিতপুর স্টেশন থেকে করা শুরু হয়।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানান, উভয় দেশে রেলপথে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো ট্রেনযাত্রী ভর্তি অবস্থায় চলাচল করবে। যাত্রীদের এতই চাপ থাকে যে, ভ্রমণকারীরা যথাসময়ে টিকিট পান না। চাহিদা বেশি থাকায়, টিকিট বিক্রি হয় বেশি।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামান মোহসী বলেন, কমলাপুর স্টেশনে ভারত ভ্রমণকারী যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। টিকিট কাউটারের দিন দিন যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুব সহজেই যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারছে।