বিভক্ত হয়ে পড়েছে বাগেরহাট বিএনপি

1

 

বাগেরহাট প্রতিনিধি।।

দু’পক্ষের কোন্দল-সংঘাতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বাগেরহাট বিএনপি। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেক নেতাকর্মী। দল ত্যাগও করেছেন অনেকে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করছে পক্ষ দুটি।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম ও বর্তমান আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিমের দ্বন্দ্বে জেলায় দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমন বিভক্তিতে ভাঙন ধরেছে তৃণমূলে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দশক ধরে দায়িত্বে থাকা বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামকে ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ফ্ক্রিয় থাকা এটিএম আকরাম হোসেন তালিমকে করা হয় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। ৩৫ সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটিতে এমএ সালামকে এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। মূলত এর পরই দলে স্পষ্ট দুটি পক্ষ তৈরি হয়। কেন্দ্রঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে এম এ সালাম ও তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। এর পর থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়া শুরু করে সালাম ও তালিম পক্ষ। নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ ছাড়া জেলা যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের কমিটি নিয়েও দু’পক্ষে কোন্দল রয়েছে।

২০১৮ সালের ৫ জুন জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। কিন্তু কমিটিকে জেলা বিএনপির সে সময়ের সভাপতি এমএ সালামের পকেট কমিটি বলে উল্লেখ করে পদবঞ্চিতদের একটি অংশ। পরে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তবে এ কমিটি নিয়েও পদবঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ জুলাই জেলা যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রদল নেতা হারুন অর রশিদকে সভাপতি ও মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের নতুন এ কমিটি গঠিত হয়। তবে ঘোষণার পরপরই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নাজমুল হুদা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সাজ্জাদ হোসাইন পদত্যাগ করেন।

চিতলমারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয় গত ৬ নভেম্বর। তবে অযোগ্য লোককে অর্থের বিনিময়ে আহ্বায়ক করা ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে যোগ্য নেতৃত্ব না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কমিটির সদস্য সচিবসহ ২৪ জন পদত্যাগ করেন।
সবশেষ ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভায় বিএনপির বিদ্রোহী পক্ষের হামলার ঘটনা ঘটে। সাবেক সভাপতি সালামের নির্দেশে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহ্বায়ক তালিম। তবে সালাম এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের বিএনপির এক সভাপতি বলেন, কয়েক বছর আগেও বাগেরহাট ছিল বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু এখন জেলার নেতাদের কোন্দলের ফলে সাংগঠনিকভাবেই তারা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিনেও জোরালো কোনো আন্দোলন করা সম্ভব হয়নি। ফলে দল প্রায় কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আফজাল হোসেন বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ১৯৯৬ সালের পর থেকে দলীয় কার্যক্রমের বাইরে ছিলেন। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানতে পারেননি। ফলে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।

জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুজাউদ্দিন মোল্লা সুজন বলেন, জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের ব্যক্তি আক্রোশেই তৃণমূলে ভাঙন ধরেছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সবাইকে বিভেদ ভুলে এক পতাকার নিচে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি সরদার লিয়াকত আলী বলেন, তদবির, সুপারিশ আর অনৈতিক উপায়ে প্রতিবারই সুবিধাবাদীরা দলের দায়িত্বে আসেন। একসময় আন্দোলনে প্রকম্পিত থাকত বাগেরহাটের রাজপথ। অথচ এখন ঘর থেকেই বের হওয়ার সাহস পান না নেতাকর্মীরা।
জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, দুর্দিনে দলের হাল ধরেছিলেন। যাকে দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির বাইরে ছিলেন। এ ছাড়া কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেক নেতা নিষ্ফ্ক্রিয় ও প্রবাসী। বিগত দিনে কেন্দ্র কোনো কর্মসূচি দিলে সে সময়ে তাদের কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি। তাই সাধারণ নেতাকর্মীরা তার ডাকে সাড়াও দিচ্ছেন না। দলের স্বার্থে স্বল্প সময়ের মধ্যে যোগ্য নেতা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।

বিএনপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির বাগেরহাট জেলা কমিটি কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিল। এই কমিটি দলকে সাংগঠনিকভাবে আগের চেয়ে শক্তিশালী করেছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রমের স্থবিরতাকে স্বীকার করে তিনি এর কারণ হিসেবে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের মিথ্যা মামলা ও হামলাকে দায়ী করেন।