মা দিবস// মায়ের প্রতি কৃষক ছেলের ভালোবাসার নিদর্শন

4
Spread the love

খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
স্নেহ, মমতা, আদর, ভালবাসার ভা-ার হলো মা। যা কখনোই শেষ হওয়ার মতো না। মা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। মায়ের চেয়ে আপনজন এই পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না।
বিভিন্ন সময় ধরে বিভিন্ন মানুষ নানাভাবে মায়ের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে সবুজ ও বেগুনীর মিশেলে ধান ক্ষেতে ফুটিয়ে তুলেছেন মায়ের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার পল্লিবিদ্যুত মোড়ে থেকে গফরগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে কিছু পথ এগুলেই সড়কের ধারে হঠাৎ চোখ আটকে যায় চলাচলকারীদের। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে বেগুনী রংয়ের ধানের চারার মাঝে সবুজ ধানে এঁকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে মধুরতম শব্দ ‘মা’। যা দেখে অনেকে থমকে যান, আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার এক অনন্য ভালবাসার সৌন্দর্য। ছবি তুলে নিয়ে যান, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

কৃষক এনামুল হক শ্রীপুর বাজারের পান সুপারির বিক্রেতা। তার বাবা আব্দুল আউয়াল মারা গেছেন বহু বছর পূর্বে। মা জহুরা খাতুন অনেক কষ্ট সয়ে, সংগ্রাম করে তাকে ও তার এক বোনকে মানুষ করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র এ ব্যবসা ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করেন। এবার মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এই ধান ক্ষেতেই বেগুনী ও সবুজ ধানের চারায় ফুটিয়ে তুলেছেন ‘মা’।

এনামুল হক জানান, বেগুনী রঙের ধান গাছ দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু তুলে ধরেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন মা নাম। মা তার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি দেখেছেন, কেউ মায়ের দোয়া দোকানের নাম দেন, কেউ আবার পরিবহনে লিখেন। তিনি যেহেতু কৃষক, তাই ধানের জমিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন মাকে। নিজের মন থেকে অনুপ্রেরণা ও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তিনি তার ধানের ক্ষেতে মা লিখেছেন বলে জানালেন।

মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালবাসা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছেন সাধারণ মানুষ। এদের একজন কৃষক আয়নল হক। তিনি বলেন, মা যে কত বড় সম্পদ যার মা নেই সেই একমাত্র বুঝে। ছোট্ট বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে বহু কষ্ট করে বড় করেছেন। আমার মা মারা গেছেন দশ বছর আগে। এরপর থেকেই মাকে ছাড়া কাটিয়েছি বহু বছর। মা ছাড়া যে বুকের ভেতর যে শূন্যতা, তা কাউকে বুঝাবার মতো না।

তিনি বলেন, আমি দিনের কৃষি কাজ শেষে টেংরা বাজারে বসে আড্ডা দেই। এনামুলের এমন কাজে আমার হৃদয় ছুয়ে যায়। তাই বাজারে আসলেই একবার হলেও দেখতে আসি মায়ের প্রতি এমন ভালোবাসা।

সাজ্জাদ হোসেন শান্ত নামের অপর এক যুবক জানালেন, মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালবাসার নিসর্শন ফেসবুকে দেখতে পাই। এখন পরিবার নিয়ে দেখতে এসেছি। মা শব্দের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি নিয়েছি। একটা ভিন্ন আবেগে তৈরি হয় এনামুলের এ ধান ক্ষেতে এলে।

সন্তান এনামুল হকের এমন ভালবাসায় মুগ্ধ মা জহুরা খাতুন। তিনি জানান, ছেলের এমন কা-ে তিনি নিজেও অভিভূত। তার ছেলে তাকে খুব ভালবাসে। সবসময় খবর নেয়। দেশে অনেকেই এখন ব্যতিক্রম। বৃদ্ধ বয়েসে মা ও বাবা বোঝা হয়ে যায়। তাদের খবর পর্যন্ত নেয় না। তার ছেলের মতো প্রত্যেকটা সন্তানের এমন মায়ের প্রতি আনুগত্য থাকার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।