রাজধানীর ৫ এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে

1
Spread the love

ঢাকা অফিস।।

রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৮, ৪০, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তর সিটির (ডিএসসিসি) ২০ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বুধবার দুপুরে ‘প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক জরিপটি প্রকাশ করা হয়।

জরিপ অনুযায়ী ডিএনসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স (মশার ঘনত্ব) ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৩৮ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশ।

এসব এলাকায় পরিত্যক্ত কনটেইনারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া জলমগ্ন মেঝে ও প্লাস্টিক কনটেইনারে বেশি মাত্রায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে ডিএসসিসির ২০ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এই দুটি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এসব এলাকায় পরিত্যক্ত কনটেইনার, প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ১৯ শতাংশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জলমগ্ন মেঝেতে ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপের জন্য ২১টি দল নির্বাচন করা হয়। সবগুলো দল ১০ দিনে ঢাকার দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি সাইটে ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এদের মধ্যে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সেখানে ২০২২ সালে মৌসুমপূর্ব জরিপে লার্ভার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে জলমগ্ন ফ্লোরে লার্ভা ছিল ২০ শতাংশ, এখন সেটি ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

প্লাস্টিক বালতিতে ছিল ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, চলতি বছর তা ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পানির ট্যাংকে ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এ বছর ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

জরিপের তথ্য এরই মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনে জমা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের চেয়ে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ডেঙ্গু এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছি। কারণ, ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধির বেশির ভাগ কারণই হলো মানুষের তৈরি।

‘ডেঙ্গু প্রকোপের প্রকৃতিগত যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তবে আমরা মনে করি, সচেতনতা আমাদের অনেকাংশেই মুক্তি দিতে পারে।’

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ডিএনসিসির নতুন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে উত্তর সিটির সব খালে গাপ্পি মাছ ছাড়ার কাজ শেষ হবে। আমাদের জায়গা থেকে মশা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘মশা প্রতিরোধে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন। এ বছর দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ।