ঝিনাইদহে বাগানে ৮ কেজি ওজনের দেশি পেঁপে!

7
Spread the love

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।।

জাপানে মেরিন সায়েন্সে পিএইচডি করে বাংলাদেশে ফিরে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করা ড. নজরুল ইসলাম তার খামারে ফলিয়েছেন বিস্ময়কর এক পেঁপে, যার নাম জায়ান্ট পার্ল পেঁপে, যেটি সাত থেকে আট কেজি ওজনের হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের এই খামারে ফলন হওয়া পেঁপেটি কিন্তু কোন হাইব্রিড বা বিদেশি জাতের পেঁপে নয় বরং পুরাদস্তুর দেশি জাতের একটি পেঁপে। অথচ ছোট সাইজের এই পেঁপে গাছে ফলন হচ্ছে ৩/৪ কেজি থেকে শুরু করে ৭/৮ কেজি ওজনের পেঁপে। খবর: বিবিসি বাংলা।

কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহাসীন আলী বলেন, তারা ওই খামার পরিদর্শন করে পেঁপেগুলো দেখেছেন। এটি সাইজে অনেক বড় ও খেতেও সুস্বাদু। কৃষকরা এটি আবাদ করলে ভালো লাভবান হবে কারণ ফলনও অনেক হয়। বাজারে থাকা অন্য পেঁপের মতো সবজি হিসেবেও যেমন খাওয়া যায় আবার পাকা ফল হিসেবেও বিক্রি করা যাবে। এলাকার কৃষকদের অনেকেই এখন ড. নজরুল ইসলামের কাছ থেকে চারা ও বীজ সংগ্রহ করছেন।

পেঁপে বাংলাদেশে কাঁচা ও পাকা – দু ভাবেই বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে আর পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। বেশ পুষ্টিকর এই ফলটি কাঁচা থাকা অবস্থায় সবুজ রংয়ের আর পাকলে হলুদ বর্ণ বা লালচে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

ড. নজরুল ইসলাম পড়ালেখা করেছেন ফিশারিজ নিয়ে। কিন্তু পরে জাপানে পিএইচডি করেন সমুদ্র বিজ্ঞান নিয়ে। পরে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন জাইকার একটি প্রকল্পে। করোনার সময় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কোটচাঁদপুরে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। খামারের মধ্যে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। সেই পুকুর থেকে তোলা মাটিতে তিনি আবাদ করছেন জায়ান্ট পার্ল পেঁপের।

তিনি বলেন, এলাকারই একজন কৃষকের কাছ থেকে বীজটি পেয়েছিলাম আমি। তিনি যথাযথভাবে আবাদ করতে পারেননি বলে ফলন পাননি। আমি খামারের পুকুরের পাড়ের উর্বর মাটিতে আবাদ করলাম। বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সাফল্য পেলাম। বাজারের হাইব্রিড পেঁপেও দেড় কেজি ওজনের বেশি সাধারণত হয় না কিন্তু আমার এই পেঁপে একটি ৭/৮ কেজি পর্যন্ত ওজনের হয়।

কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলীর মতে, আকারের মতোই স্বাদের হওয়ায় এই পেঁপেটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

পাকা পেঁপে ফল হিসেবে বিশেষ প্রিয় গৃহবধূ ফারহানা ইসলামের। তার শিশু সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে চিকিৎসক পেঁপে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আমার খুব প্রিয় একটা ফল। আর বাচ্চার কারণে তরকারি হিসেবেও নিয়মিত পেঁপে খাই আমরা।

কীভাবে ফলন ভালো হয়: ড. নজরুল ইসলাম বলছেন, প্রথমত মাটির মান খুব ভালো হতে হবে আর জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের তোলা মাটি সাধারণত অনেক বেশি উর্বর হয় বলে তিনি পেঁপেটি আবাদের জন্য সেই মাটিকেই বেছে নিয়েছেন।

পেঁপে চাষ সহজ মনে হলেও আসলে কিন্তু ততটা সহজ ব্যাপার না। আমি কখনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। বরং জৈব সার ব্যবহার করেছি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁপে চাষে সবসময়ই বিশেষ যত্ন নেয়ার পাশাপাশি অনেক ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করতে হয়। পেঁপে চাষের জন্য দরকার উঁচু জায়গা যেখানে পানি জমার সম্ভাবনা থাকবে না। আবার হাইব্রিড পেঁপে অনেক ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও জায়ান্ট পার্ল পেঁপে খুব একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। যে কোন পরিবেশের জন্য সহনশীল।

ড. নজরুল ইসলাম বলেন, এক একটি পেঁপে গাছে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ চার মন পর্যন্ত পেঁপে হতে পারে।

এর মধ্যে প্রথম দিকের পেঁপেগুলো ৭/৮ কেজি ওজনের হয়। কখনো কখনো দশ কেজি পর্যন্ত হতে পারে একটি পেঁপের ওজন। আর দ্বিতীয় ধাপে যে পেঁপে পাওয়া যায় ওই একই গাছ থেকে সেগুলো ৪/৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।

তবে এক বছরে ফল সংগ্রহের পর দ্বিতীয় বছরের পর নতুন করে গাছ রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাহলে আবার প্রথম দফার মতো বড় সাইজের পেঁপে পাওয়া যাবে। চারা বোনার পর ছয় মাসের মধ্যে ফল বাজারে নেয়ার উপযোগী হয়।

আমার কাছ থেকেই অনেকে এখন চারা বীজ নিচ্ছে। কিছুদিন আগে তিন হাজার বীজ করলাম। আশা করি, এই ফলটি পেঁপের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে এটিকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে।