মণিরামপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন # দূর্যোগ এবং ব্লাস্ট রোগে হতাশায় চাষিরা

7

 

আবু বক্কার সিদ্দীক,মণিরামপুর (যশোর) থেকে॥

যশোরের মণিরামপুরে মাঠের পর মাঠ বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হতাশা আর উৎকন্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন চাষিরা। আকাশে ঘটঘটা মেঘের উকি আর ব্লাস্ট রোগে আক্রান্তের ভয়াবহতায় দিশেহারা চাষিরা। কোন অবস্থাতেই সামাল দিতে পারছেননা ব্লাস্ট রোগোর আক্রমণ থেকে। তারপর ঘনঘটা মেঘের কারনে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংঙ্খায় চাষিরা। এসব অবস্থার মধ্যে চাষিদের যেন চোখে ঘুম নেই। ধান ঝাড়াই-মাড়াইয়ের জন্য বাড়ির কৃষাণ-কৃষাণীরাও খুব ব্যস্ত রয়েছে। আর এ ধানের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণীরা। যদিও অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবার মণিরামপুরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হিসেবে দেখছেন চাষিরা। বিস্তৃীর্ণ দিগন্ত জুড়ে যেন সোনালী রঙ ধারণ করেছে পাকা ধানের রঙে। যদিও অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় এ বছর ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টের জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। অফিস সূত্র জানিয়েছে, মোট রোপনের ১৯ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে উপশি জাতের ধানের চাষ করাহয়েছে। ৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। উপজেলার সবথেকে বেশি ধানের আবাদ করা হয়েছে খেদাপাড়া এবং রোহিতা ইউনিয়নে। এর মধ্যে খেদাপাড়া ইউনিয়নে এ বছর বোরো আবাদ ২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর এবং রোহিতায় বোরো চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে।

খেদাপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন এবং দর্পন বিশ্বাস দাবী করেছেন বোরো ধান যেভাবে ফলন হয়েছে তা চাষিরা ঘরে তোলার অপেক্ষায় মাত্র। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত এমন তথ্য জানতে চাইলে তারা জানান, চাষিদের এ ব্যাপারে সহযোগীতা করা হচ্ছে। রোহিতা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা তুহিন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন এ বছর বোরো চাষে চাষিরা আশানুরুপ ফলন পাবেন বলে আশা করছি। তবে, প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংঙ্খায় রয়েছেন চাষিরা। ঝড়ো-হাওয়া, শিলা-বৃষ্টি হলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে দাবী করেছেন তিনি। এ কর্মকর্তা আরও জানান, চলতি মৌসুমি উপজেলার অধিকাংশ মাঠে রড মিনিকেট (স্থানীয় নাম) এবং ব্রি-৬৩ জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

চরম হতাশার কথা জানিয়েনে উপজেলার মাছনা খানপুর গ্রামের চাষি শাহজাহান আলী, মোতাসিম বিল্লাহ মিন্টু এবং মাছনা গ্রামের হাফেজ শামসুর রহমান। তাদের দাবী এ বছর অতীতের তুলনায় ক্ষেতে যথেষ্ঠ ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু ব্লাস আর কারেন্ট পোকার অত্যাচারে সকল চাষি দিশেহারা।

কৃষি অফিসের কোন পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্থ এ কৃষকরা জানান খানপুর ইউনিয়নে কোন উপ-সহকারি দায়িত্বে রয়েছেন তার চেহেরাও বলতে পারবেননা চাষিরা। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছ, রুবিনা আক্তার নামে এক নারী উপ-সহকারি এই ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্র আরও জানিয়েছে নারী এ কৃষি কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার অফিসকে ম্যানেজ করেই তিনি কাগজে-কলমে চাকুরি করে যাচ্ছেন। যে কারনে চাষিদের সাথে তার পরিচয় থাকার কথা নয়। তবে এসব কথা অস্বীকার করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার।

তবে, উপজেলার অধিকাংশ মাঠের বোরো ধান লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। পড়ন্ত বিকেলে বিস্তৃীর্ণ মাঠের দিকে তাকালে মনে হবে পাকা ধানে প্রকৃতিকে যেন সোনালী রঙ ধারন করেছে। কোন কোন মাঠে দু-একটি ক্ষেতের ধান কাটতে শুরু করেছেন চাষিরা।

এদিকে ভবদহের সমস্যার কারনে স্থায়ী জলাবদ্ধ থাকায় ৭৯৫ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। ভবদহ সংলগ্ন নেহালপুর ইউনিয়নে ১৩৬, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৯৩, কুলটিয়া ইউনিয়নে ১৬৭, মনোহরপুর ইউনিয়নে ৫৩, খানপুর ইউনিয়নে ১১৫ এবং হরিদাসকাটি ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো আবাদ করতে পারেননি চাষিরা।

আম্রঝুটা গ্রামের চাষি আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরে ১৩ থেকে ১৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হতো। কিন্তু ভবদহের সমস্যার কারনে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় এ বছর মাত্র ৭ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি।

এসব ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, এ বছর মণিরামপুরের বোরো আবাদ খুবই ভালো। ব্লাস রোগ এবং কারেন্ট পোকার আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেভাবে শোনা যাচ্ছে তা অতটা না। তবুও আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরও অল্পস্বল্প কিছু হলেই চাষিয়া একটু চিল্লা-চিল্লি করে।