ঢাকা অফিস।।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে ১৪ বার বেড়েছে জেট ফুয়েলের দাম। আর এই সময়ে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক দফায় ১৫ টাকা করে বেড়েছে।
এদিকে জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিমানের টিকিটেরও মূল্য বেড়েছে। গত দেড় বছরে দেশে উড়োজাহাজের জ্বালানির দাম ১১৭ শতাংশ বেড়েছে। যা নিয়ে শঙ্কিত দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো।
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। ওই মাসে প্রতি লিটারের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল লিটারে ১৩ টাকা বেড়ে দাম পৌঁছেছে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ, ১৮ মাসের ব্যবধানে দেশে জেট ফুয়েলের দাম ৫৪ টাকা বা ১১৭ শতাংশ বেড়েছে।
এরপর ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় দেশেও ফের দাম বাড়ানোর আলোচনা চলছে।
দফায় দফায় জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখন না হয় বুঝলাম যুদ্ধের কারণে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে। কিন্তু দেশে গত ১৮ মাস ধরে ননস্টপ জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে। কোভিড মহামারীর সময় যখন সব কিছু বন্ধ, তখনও জেট ফুয়েলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে ১৩ টাকা বেড়েছে, ওটাকে আমি হিসেবে ধরছি না। আমি ১৮ মাসের হিসেব ধরে কথা বলছি। ৫৪ টাকা দাম বেড়েছে এই সময়ে। এটা কতটুকু যৌক্তিক আমি জানি না। এখন বলা হচ্ছে যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে জেট ফুয়েলের, তাহলে কোভিডকালে কেন দাম বাড়বে?
কোভিডের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার যখন এভিয়েশন খাতে ভর্তুকি দিয়ে গেছে, তখনও দেশে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন কামরুল।
তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী ধকল কাটিয়ে এভিয়েশন খাতটা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পেয়েছে। এ সময় এই খাতের পাশে থাকতে হবে। না হলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পেরে উঠব না। দেখা যাবে দিন শেষে বাজারটা রয়ে গেছে, কিন্তু সেটা চলে যাবে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে।
উড়োজাহাজ চালাতে যে খরচ, তার একটি বড় অংশ হয় জ্বালানির পেছনে। ফলে জেট ফুয়েলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই টিকেটের দাম বাড়বে। আর ভাড়া বেড়ে গেলে দেশের ভেতরে বিমানে ওড়ার যাত্রী কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কামরুল। টিকে থাকতে হলে তো আমাকে ভাড়ার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। মোট কথা ভাড়া বেড়ে গেলে যাত্রী কমবে, এয়ারলাইন্সের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এভিয়েশন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, কোভিডের আগেও ঢাকা থেকে যশোরের ভাড়া ছিল ৩ হাজার টাকার আশপাশে। তিন হাজার টাকায় ঢাকা-সৈয়দপুর টিকেটও পাওয়া যেত। কিন্তু এখন চার হাজারের নিচে কোনো গন্তব্যের টিকেট নেই ইউএস বাংলায়।
দাম বাড়িয়েছে বেসরকারি আরেক এয়ারলাইন্স নভো এয়ারও। এ মাসেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর ও কক্সবাজার রুটে প্রতি টিকিটে ৫০০ টাকা করে এবং যশোর ও বরিশাল রুটে প্রতি টিকিটে ৩০০ টাকা করে বাড়িয়েছে এ এয়ারলাইন্স।
এয়ারলাইন্সগুলোর আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) তথ্য বলছে, গত এক বছরে জেট ফুয়েলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে ১২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
এই বৃদ্ধির হার এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে কম, ৯৫ শতাংশ। আর সবচেয় বেশি উত্তর আমেরিকায়, ১৫৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত ৮ এপ্রিল এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে প্রতি টন জেট ফুয়েলের দর ছিল ৯৯৩ দশমিক ০৩ ডলার, ইউরোপে ১১৫২ ডলার, মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকায় ১০৩৪ দশমিক ৭২ ডলার, উত্তর আমেরিকায় ১৪০৪ দশমিক ২৫ ডলার এবং লাতিন ও মধ্য আমেরিকায় ১১৭০ দশমিক ২৬ ডলার।