ইসির ‘ব্যর্থতায়’ পেছালো কুসিক নির্বাচন, আসছে প্রশাসক

3

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা।।
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী ২০ জুনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এজন্য চলতি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশনের প্রথম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইসি থেকে বলা হচ্ছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চিঠির জবাব পেতে দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের (১৬ মে) মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়, ২০২২ সালের ১৬ মে‘র মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে হবে। এবং এটা নিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি ইসি সময় মতো নির্বাচন করতে না পারে তাহলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন ইসির প্রথম সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব খন্দকার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আগামী ১৬ মে’র মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করার কথা আইনে বলা থাকলেও প্রস্তুতির কারণে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে বলে আমরা মনে করছি না।’
ইসি সচিব বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনি কোনো জটিলতা রয়েছে কি না এ বিষয়ে আমরা গত ৭ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিই। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চিঠির কোনো জবাব না দেওয়ায় ফের ৩০ মার্চ চিঠি দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে আইনি কোনো জটিলতা নেই ।’ ইসি সচিবের দাবি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাব যথা সময়ে না দেওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, ১৬ মে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন করতে না পারলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৬ মে‘র মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কমিশন এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আমরা সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেব।’ তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচন যথা সময়ে না হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কোনোভাবেই দায়ী করা ঠিক হচ্ছে না। এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। কারণ ২০২১ সালের নভেম্বরই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয় যে, ২০২২ সালের ১৬ মে‘র মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বিদায়ী কমিশন তা আমলে নেয়নি। তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এখন নতুন ইসি এসে আমাদের দায়ী করলে তা ঠিক হবে না।’ হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘গত ৭ মার্চ নতুন ইসি থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে কোনো আইনি জঠিলতা রয়েছে কি না? আমরা খোঁজখবর নিয়ে গত ৪ এপ্রিল চিঠির জবাবে বলি কোনো জঠিলতা নেই। তিনি বলেন, ‘খোঁজখবর নিতে হলে তো কিছুটা সময় লাগে।’ তিনি বলেন, ‘ইসি যদি আগামী ২০ জুনের মধ্যে নির্বাচন করে তাহলেও প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। ১৬ মে’র পর কুসিক নির্বাচন হলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে।’ উল্লেখ্য, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার ৩৬ দিন পর মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রথম কমিশন সভা করে। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে কমিশনের দ্বিতীয় সভায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামী ২০ জুনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করা হবে। জানা গেছে, কুসিকে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ১৭ মে। আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ। সেই অনুযায়ী এই সিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১৬ মে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট নিতে হয়। সেদিক থেকে গত ১৬ নভেম্বর এই সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। দু’টি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ওই বছরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৭ সালে এসে এই সিটির পাশের কয়েকটি ইউপিকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিনগুণ। এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা। বর্তমানে এই সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। এই সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে মেয়র পদে রয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু। গত নির্বাচনে এই সিটিতে ১০৩টি কেন্দ্রে ছিল আর ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন।