সাহাবুদ্দীন আহমদ: দেশের ক্রান্তিলগ্নের এক উজ্জ্বল সারথি

3

নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থানের পর একজন সৎ নির্ভীক এবং নিরপেক্ষ মানুষের সন্ধানে নামে ২২ দলীয় ঐক্যজোট। তখনকার প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীন একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিল সব রাজনৈতিক দলের প্রধান বিষয়। সব দলেরই ঐক্যের ভিত্তিতে তৎকালীন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ ছিলেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ১৫ দলীয় ঐক্য জোটের নেতা শেখ হাসিনা ও ৭ দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয় নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে। জাতির একটি ক্রান্তি লগ্নে তিনি দেশের হাল ধরেছিলেন।

১৯৯০’র ১৪ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ঐ বছরের ৬ ডিসেম্বর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করলে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার নেতৃত্বে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন হয়, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়। বছরের শেষ দিকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে তিনি আবার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফিরে যান। এজন্য জাতীয় সংসদে একটি নতুন আইন পাশ করতে হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেন।

কর্মক্ষেত্রে সাহাবুদ্দীন আহমদ অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ন্যায়নিষ্ঠ বিচারে তিনি ছিলেন অবিচল। চাকরি সম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব ও শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে মামলায় বিচারপতি হিসেবে তার দেয়া রায় বহুল প্রশংসিত। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তার রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি। সাহাবুদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবসময় শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন তিনি। এর কারণ হলো: ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ জীবন যাপনের পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ, বিচক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণ হিসেবে এক অনন্য নজীর রেখে গেছেন তিনি।

এছাড়াও সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণে, সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কালাকানুন বাতিলে অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য সবসময় শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। এক্ষেত্রে বলা যায়: গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সংসদীয় ব্যবস্থা চালু ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাহাবুদ্দীন আহমদ স্মরণীয় এক নাম।

সাহাবুদ্দীন আহমদ দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে সিএমএইচে ইন্তেকাল করেছেন। দেশের ইতিহাসের এই গুণী ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে আমরা শোক প্রকাশ করছি। একইসাথে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দেশ ও জাতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের কীর্তি স্মরণ করবে চিরকাল। স্বৈরচারী সরকারি ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় উত্তরণে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।