এইখানে এক নদী ছিল…

1
Spread the love

যশোর অফিস

বেনাপোলে ভারত-বাংলাদেশ চেকপোস্টের মাত্র কয়েকশ গজ দূরে নারায়ণপুর সড়কের পাশে দ্বিতল ভবনের মালিক ইয়াকুব হোসেন। বছর দশেকের বেশি হলো বাড়িটি করেছেন তিনি। এরও আগে আশপাশে গড়ে উঠেছে আরও অনেক স্থাপনা। এসব স্থাপনার পাশ দিয়ে সরু ড্রেন বয়ে গেছে ওপারের বনগাঁর পেট্রাপোলে।

১৯২৭ সালের ভূমি জরিপ রেকর্ড অনুযায়ী এই সরু ড্রেনসহ দু’পাশের এলাকাজুড়ে ছিল দুই বাংলার সংযোগকারী হাকোর নদী। ভারতে নদীটি এখনও প্রবহমান থাকলেও অস্তিত্ব মিলছে না বাংলাদেশ অংশে। ব্যক্তিমালিকানায় দখল করে নদীর বুকে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ভবন। পুকুর কেটে মাছ চাষ কিংবা ফসলের আবাদও করছেন অনেকে। পরিবেশ রক্ষায় হাকোর নদী দখলমুক্ত করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

ভবন মালিক ইয়াকুব আলীর দাবি, এখানে নদী ছিল- এমন কথা তিনি কখনও শোনেননি। পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি এ জমি ভোগ করছেন।

নদীর জায়গা ঘিরে মাছ চাষ করেন বেনাপোল পৌরসভার নামায গ্রামের কাউন্সিলর শাহাবুদ্দিন মন্টু। তিনি বলেন, নদী দখলের প্রশ্নই ওঠে না। বরং ১৯৬২ সালের আরএস রেকর্ডের ভিত্তিতে তিনি এ জমির মালিক।

নামায গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সাহেব আলী জানান, এখানে একটি নদী ছিল- তা কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই।

শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, পরিবেশ রক্ষায় হাকোর নদী দখলমুক্ত করা জরুরি। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এর পর এ ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসনা শারমীন মিথিলা বলেন, নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা করার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। খুব শিগগির এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যশোরের নদী আন্দোলনের নেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, হাকোর ছাড়াও বেতনা, মুক্তেশ্বরী, হরিহরসহ আরও কয়েকটি নদীর বিভিন্ন অংশ অস্তিত্বহীন। অবৈধ দখল, নদীতে আড় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও উজানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, নদীর জায়গা পুনরুদ্ধার ও প্রবহমান করার ব্যাপারে সরকার খুবই কঠোর। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ ব্যাপারে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।