সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ও অনুগতরাই নতুন ইসিতে: নুর

1


ঢাকা অফিস।।


বিশিষ্টজনদের পরামর্শের তোয়াক্কা না করে সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ও অনুগত ব্যক্তিদেরই নতুন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের পরামর্শ ছিল, সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী ও সদ্য অবসরে যাওয়া কোনো ব্যক্তিকে যেন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হয়। অথচ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের চারজনই সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে রয়েছে আইন না মানাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। তাই গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জোর দাবি জানাই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির আদলে সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটি বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত ১০ জনের তালিকা প্রকাশ করেনি, যা তাদের কাজের অস্বচ্ছতারই বহিঃপ্রকাশ।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানসহ ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও শক্তিশালী গণতন্ত্রের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন নুরুল হক নুর। অনতিবিলম্বে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দেশের চলমান সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর, সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানাকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারের পছন্দসই ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ভিন্নমতের রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে একটি পক্ষপাতদুষ্ট আইন করা হয়েছে। যা সর্বজন গ্রহণযোগ্য ছিলো না।

নতুন নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়া কমিশনারদের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের এ সদস্য সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগ, পদোন্নতি নিয়ে বিতর্কসহ অসদাচারণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বিতর্কিত কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সচিব ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান অবসরের পরও সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী হিসেবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানও সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে সদ্য অবসরে যান।

বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একপেশে দুটি (২০১৪ ও ২০১৮ সালের) জাতীয় নির্বাচন সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে গণঅধিকার পরিষদ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনরায় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানায়। সংবিধান এমন গ্রন্থ নয়, যা পরিবর্তন করা যাবে না। বরং সময়ের প্রয়োজন ও জনগণের চাহিদার আলোকে ‘গণদাবি’ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাই সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে গণঅধিকার পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, মাহফুজুর রহমান খান, মো. সোহরাব হোসেন, মাহফুজুর খান, সহকারী আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।