খুলনার দাকোপের পতিত জমিতে তরমুজ চাষ

10

দাকোপ প্রতিনিধি।।


অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। গত বছর তরমুজে ব্যাপক লাভ হওয়ায় এবার সেই ঝোঁক আরও বেড়েছে। এবার পতিত জমিতেও প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে। এই চিত্র খুলনার দাকোপ উপজেলার। মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

এ অঞ্চলে সাধারণত জানুয়ারির শেষ থেকে তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এ বছর অসময়ে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ জমি নরম ছিল। ফলে মৌসুম শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এদিকে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় জমির ইজারামূল্যও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সেচের ব্যবস্থা করে পতিত জমিতেও তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি দাকোপ উপজেলার পশ্চিম বাজুয়া, পূর্ব বাজুয়া, সাহেবের আবাদ, ধোপাদী, হরিণটানা, খেজুরিয়া, উত্তর বানীশান্তা, কালিকাবাটি, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, কামারখোলা, সুতারখালী; বটিয়াঘাটার বরণপাড়া, গঙ্গারামপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব গ্রামেই এখন তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ চলছে। চাষিদের ব্যস্ততায় খেত ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য। দিন-রাত কলের লাঙল চলছে। অনেক মাঠেই বীজ রোপণ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ জায়গায় জমি প্রস্তুতির একেবারে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। দু-এক জায়গায় আবার চারা বাড়তে শুরু করেছে। সার, পানি ছিটানো আর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।

মৌসুমি শ্রমিকদেরও দম ফেলার ফুরসত নেই। দাকোপের পশ্চিম বাজুয়া বিলের মিনতি, কবিতা, সুপ্রিয়া মণ্ডল একটি খেতে বীজ রোপণ করতে করতে বলছিলেন, ৬০ টাকা প্রতি ঘণ্টায় কাজ করছি। দম ফেলার সময় নেই। প্রতিদিন কম করে সাত-আট ঘণ্টা কাজ হচ্ছে। মৌসুমে এই তিন মাসে এই অঞ্চলের নারীরা ঘরের কাজ সেরেও ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করেন।

ওই বিলের কৃষক অনিল জোয়াদ্দার গত বছর ২০ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। এ বছর আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩২ বিঘাতে ঠেকেছে। তিনি বলেন, দাম থাকলে তরমুজে ব্যাপক লাভ। এবার মানুষ তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। কোথাও কোনো জমি ফাঁকা থাকছে না। লাখপতির আশায় সবাই নেমেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
ওই মাঠের কৃষকেরা বলছিলেন, গত বছর তরমুজ লাগানোর জন্য এক বিঘা জমির ইজারামূল্য ছিল তিন থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। এবার ব্যাপক চাহিদার কারণে ইজারামূল্য প্রতি বিঘা ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ডিজেলের দাম বেশি থাকায় চাষের খরচ বেড়েছে, সারের সংকট আছে আর বীজের দামও বেড়েছে। আবহাওয়া নিয়েও শঙ্কিত তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, জেলার মোট উৎপাদিত তরমুজের অর্ধেকের বেশি চাষ হয় দাকোপে। আগে থেকে চাষ হওয়া এলাকার সঙ্গে এবার কয়েকটি গ্রামের পতিত জমিতে নতুন করে এই আবাদ হচ্ছে। গত বছর এ উপজেলায় ৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ বছর ৪ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে ৫ মাস সময় লাগে। প্রতি বিঘা আমন উৎপাদনে ৯-১১ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১২-১৪ হাজার টাকা। এতে তরমুজ বিক্রি হয় ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। যদিও এবার খরচ কিছুটা বাড়বে।

পতিত জমিতে প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করেছেন সুতারখালীর রণজিৎ কুমার। তিনি বলেন, ‘আগে এখানে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হতো। আইলার পর থেকে শুধু আমন হয়। তরমুজ লাভজনক হওয়ায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষের চেষ্টা করছি। এই বিলে যাঁরা তরমুজ চাষ করছেন, তাঁদের সবাই নতুন।’