বইমেলায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা: বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই

2

করোনা ভাইরাসের নতুন দাপটের মধ্যে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২২’ হবে কি হবে না- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়াদ কমিয়ে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। রীতি অনুযায়ী মেলার সময় থাকে মাস। তার পরিবর্তে এবার ১৪ দিন করা হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়ে রেখেছে, আপাতত ১৫-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলার সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সময় আরও বাড়ানো হবে। নতুন এই সময়সূচিতে বইমেলার সব প্রস্তুতি ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু শুরুর মাত্র দুইদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বইমেলায় জঙ্গি হামলা হতে পারে- এমন সম্ভাবনার কথা বলছে। রোববার মেলার সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার পর ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কাকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তবে পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখা-সহ তাদের সব রকম নিরাপত্তা প্রস্তুতিও রয়েছে। এমন কি, যে কোনো জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট-কেও প্রস্তুত রাখা হবে।

হামলার এমন আশঙ্কার কারণ হিসেবে ডিএমপি কমিশনার অভিজিৎ রায় হত্যার রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মতে এই রায়ের পর জঙ্গিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল হক জিয়া বাইরে থাকায় হামলার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

আমরা জানি, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে জঙ্গিদের চাপাতির হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়। সেই হামলায় আহত হয়ে আঙুল হারান তার স্ত্রীও। ওই ঘটনার মামলায় রায় হয় গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি। রায়ে মেজর জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।

অভিজিৎ রায়ের উপর হামলাই বইমেলা এলাকায় হামলার ঘটনা শেষ বা প্রথম নয়। এর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই বইমেলা থেকে বেরিয়ে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিলেন প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ। পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে সেই হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা।

এটা ঠিক, গত কয়েক বছর ধরে সরকারের জঙ্গিবিরোধী অভিযানসহ নানান তৎপরতায় অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড। তবে নানা কৌশলে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় জঙ্গিরা। বিভিন্ন সময়ে হুমকিও দিয়েছে তারা। এমনকি কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। তাই ডিএমপি কমিশনারের আশঙ্কাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আমরা মনে করি, বইমেলা চলাকালীন যে কোনো সন্দেহজনক তথ্য বা তৎপরতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বাড়াতে হবে গোয়েন্দাগিরি। আমরা চাই না বাঙালির প্রাণের উৎসবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটুক।