অপরিকল্পিত মাছের ঘেরে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির আবাদ বন্ধ

0
Spread the love

নড়াইল প্রতিনিধি।।

নড়াইলের বাশঁগ্রাম বগুড়া দৌলতপুর আন্দারকোটা বিলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বের না হতে পারায় শীত মৌসুমেও পরিপূর্ণ বিল-জমি। ফলে ফসল আবাদ করতে পারছেন না কৃষক জমির মালিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল সদর, লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা কাশিপুর ইউনিয়ন, সদরের বাঁশগ্রাম এবং কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের মাঝে মাছের অভয়াশ্রম বলে খ্যাত বাশঁগ্রাম বগুড়া দৌলতপুর আন্ধারকোটা বিল। দুটি বিলের পানি খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালীরা বাঁশগ্রাম, বগুড়া, গোপালপুর কামাল প্রতাপ, নন্দদখোল, ডুমদি, টাবরা হুগলাডাঙ্গা, লোহাগড়া উপজেলার আমাদা, বয়রা, উলা, তালবাড়িয়া, কুমড়ি গ্রামে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করে। এতে পানি বরে হতে না পারায় বর্ষায় হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই পানি এখনো নামতে না পারায় আবাদ করা যাচ্ছে না কোনো ফসলই।

এর থেকে মুক্তি পেতে প্রায় দেড়বছর আগে স্থানীয় জমির মালিক কৃষকরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগও দেন। প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত করে অভিযুক্ত তিন ঘের মালিককে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তারা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার ঘেরের কাজ শুরু করে।

ভুক্তভোগী বগুড়া গ্রামের সোহেল মোল্যা বলেন, চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের কারও ফসল নষ্ট করে আবার কারও জমিতে জোরপূর্বক ঘের কাটা হয়েছে। আবার এমনভাবে ঘের কাটা হয়েছে তাতে জমিতে যাওয়ারও কোনো পথ নেই।

তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের কাটায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আউস, আমন এবং পাট চাষ করা যায়নি। শীতকালেও জমিতে পানি থাকায় বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছি।

অভিযুক্ত ঘের মালিক মিন্টু মিয়া বলেন, আন্দারকোটা বিলের জলাবদ্ধতার জন্য আমি একা না আরও অনেক প্রভাবশালীর ঘের রয়েছে। তারাই বেশি দায়ী।

অভিযোগ উঠেছে, সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামের এনায়েত কাজী প্রায় ১৫ একর, পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের কামরুল খান ৪০ একর এবং কামঠানা গ্রামের মিন্টু মিয়া আন্ধারকোটা বিলে ৬০ একর সহ ১০০জন ঘের মালিক হাজার হেক্টর জমিতে মাছের ঘের করছে।

কামাল প্রতাপ গ্রামের সত্যরঞ্জন মালাকার বলেন, আমার একর ১৪ শতক জমিতে ধান তিল আবাদ করেছিলাম। সেই ফসল নষ্ট করে কামরুল খান মাছের ঘের কেটেছে।

আরেক বাসিন্দা ভক্তদাস বিশ্বাস বলেন, আমার ৭৮ শতক জমিতে মিন্টু মিয়া জোরপূর্বক ঘের কেটেছে।

সিদ্দিক মল্লিক বলেন, মামলা জনিত কারণে আমি এলাকায় না থাকায় কামরুল এনায়েত আমার একর ৩৫ শতক ফসলি জমিতে জোর করে ঘের কেটেছে।

এছাড়া একই গ্রামের বাসিন্দা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ফায়েকুজ্জামান ফিরোজের ৪২ শতক, দুলাল বিশ্বাসের ৯০ শতক, শক্তিপদ বিশ্বাসের ৭৮ শতক, শান্তিরাম বিশ্বাসের একর ২৬ শতক, প্রশান্ত বিশ্বাসের ৬০ শতক, সুশীল মন্ডলের ১২ শতক, সৈয়দ রানার ৭৫ শতক এবং সৈয়দ নায়েব আলীর এক একর জমি জবর দখল করে কামরুল, এনায়েত মিন্টু মাছের ঘের কেটেছে।

ওই গ্রামের জয় বিশ্বাস, খায়ের মল্লিক আমজাদ কাজী বলেন, কামরুল খান মিন্টু মিয়া এমনভাবে ঘের কেটেছে তাতে তিনজনের পৈত্রিক এক একর ৭০ শতক জমিতে যাওয়ার কোনো পথ নেই। প্রতিবাদ করলে হত্যাসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

তারা আরও জানান, কামাল প্রতাপ গ্রামে দুটি হত্যাকাণ্ডের পর এখন অনেকেই গ্রাম ছাড়া। এই সুযোগে অবৈধভাবে একাধিক মাছের ঘের তৈরি করছে প্রভাবশালীরা।

তবে জমি জবরদখলের অভিযোগ অস্বীকার করে এনায়েত কাজী বলেন, ‘আমি নয়, এসব জবরদখল করে কামরুল এবং মিন্টু ঘের কেটেছে। তারা অধিকাংশ জমির মালিকদের কাছ থেকে না শুনে চুক্তি না করে ঘের কেটেছে।’

তবে কামরুল খান বলেন, ‘বিষয়টি সেরকম নয়। আপনারা সরেজমিনে এসে জমির মালিকদের সঙ্গে মুখোমুখি করেন তাহলে বিষয়টির সত্যতা বোঝা যাবে।’

অভিযুক্ত মিন্টু মিয়া বলেন, ‘বিলে প্রায় ৬০ একর জমিতে মাছের ঘের কাটছি। এর মধ্যে আমার নানা শ্বশুরের নিজস্ব ২০ একরের বেশি জমি রয়েছে। নিজেদের জমি ছাড়া অন্য জমির মালিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। অনেকে জমি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন অন্যরা জমি দিলে আমরাও জমি দেবো। অনেকের মৌখিকভাবে সম্মতি নেওয়া হয়েছে।’

বিষয়ে লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আররাফ হোসেন বলেন, ওই এলাকায় প্রায় হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে খালের মুখ বন্ধ করে মাছের ঘের করেছে। অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় একদিকে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে অন্যদিকে দেশি মাছের বিলুপ্তি হচ্ছে।

কলমিলতা পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি সায়েদ আলী শান্ত জাগো নিউজকে বলেন, অবস্থা প্রায় সারা জেলার। সদরের নুনীক্ষীর, সাতঘোরিয়া, বড়েন্দার, গোবরা কাড়ার বিলের প্রায় ১৫০০ একর জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করার ফলে খাল থেকে জমিতে প্রয়োজনের সময় ঢুকতে এবং বের হতে পারে না। ফলে ফসলহানি এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে।

বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে অর্থাৎ কৃষি জমি নষ্ট করে ধরনের মাছের ঘের করা যাবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।