যে কারণে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন শার্শার চাষিরা

4
Spread the love

বেনাপোল (যশোর) উপজেলা প্রতিনিধি  ।।

যশোরের শার্শার মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষার ক্ষেতগুলোতে মৌমাছির গুনগুন শব্দে চারপাশ মুখরিত। গত কয়েকদিন আগে একটানা বৃষ্টির পরেও যেসব সরিষা ক্ষেত সতেজ আছে সেই সরিষা ক্ষেত নিয়ে কৃষকরা হাজারও স্বপ্ন দেখছেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন যশোরের শার্শার চাষিরা। চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার ৯০০ কৃষক।

উপজেলার শার্শা, নাভারন, বাহাদুরপুর, ডিহি, নিজামপুর লক্ষণপুর, পুটখালি, গোগা কায়বা উলাশিসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায় খণ্ডখণ্ড হলুদ ফুলের চাদর যেন বিছানো রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটির গুণাগুণ ভেদে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ করেছেন কৃষকরা। বছর বারি-১৪, বারি-১৭, ১৮, বিনা-৯, রায়, টরি-৭সহ দেশীয় জাতের সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। অল্প দিনে বেশি ফলনের আশায় চাষিরা এটাকে লাভের ফসল হিসেবে দেখছেন।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা।

গত মৌসুমে হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার এক হাজার ৯২০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। সরিষার গাছ, ফুল ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।

বেনাপোল গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ বলেন, গত বছর সরিষার দাম ভালো ছিল, চাহিদাও ছিল ব্যাপক, তাই এবারও সরিষা চাষ করেছি ফলন ভালো হবে এমন আশায়। উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বেন।

ঘিবা গ্রামের মহিউদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা ওঠার পর সেই জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় এবং চাষে খরচও কম হয়।

বেনাপোলের বারোপোতা গ্রামের আব্দুল মোমিন বলেন, বারি-১৪ সরিষা গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে, এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।