বাড়ির আঙিনায় চলাচল করতে বাঁশের সাঁকো!

8
Spread the love

মনিরামপুর (যশোর)  প্রতিনিধি ।।

তীব্র শীতের মধ্যে ভবদহ বিলপাড়ের মানুষগুলো টিকে থাকতে পানির সঙ্গে মিতালি করে নিয়েছে। পায়ে মোজা-জুতা পরে শীত নিবারণের সুযোগ নেই। সাঁকো থেকে পা পিছলে পড়লেই পানির মধ্যে পড়ে গিয়ে পরিধেয় কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। আর এমন ঘটনা প্রতিদিন দুই-একবার ঘটে থাকে।

চলতি শীত মৌসুমে পানি সরে যাওয়ার লক্ষণ নেই। বাড়ির উঠানে এখনো হাঁটু পানি। সাঁকো পারাপারেই শোবার ঘর থেকে রান্নাঘর কিংবা গোয়াল ঘরে যেতে হচ্ছে। পানির সঙ্গে মিতালি করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। রোববার যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ বিলপাড়ের বাজেকুলটিয়া, হাটগাছা, সুজাতপুর গ্রামে গেলে এসব চিত্র চোখে পড়ে। অঞ্চলের নারী-পুরুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করে চলেছে। শীত মৌসুমে বাড়িঘর থেকে পানি সরে গেলেও এবার সরার লক্ষণ নেই। জাওয়াদের প্রভাবে পানি বেড়ে গেলেও তা আর সরেনি। বাজেকুলটিয়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধা মহেনতারা ম-বলেন, পানিতে থাকতে থাকতে হাতের তালু পায়ের নিচের অংশ জুইয়ে ধরেছে (ঘা হয়ে গেছে)তিনি দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, তাদের কোনো গতি হবে না। গৃহবধূ শিল্পী ম-বলেন, বয়স্করা পানিতে সাবধানে চলাফেরা করলেও বাচ্চাদের নিয়ে সব সময় সংশয়ে থাকতে হয়। পানি নিষ্কাশনে সেচপাম্পেই সমাধানের পথ খুঁজছে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড)ইতোমধ্যে সেচপাম্পে পানি নিষ্কাশনের কার্যকারিতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হলেও প্রকল্প থেকে সরে আসেনি পাউবো কর্তৃপক্ষ। নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েন পাউবোর কর্মকর্তারা। বর্ষা মৌসুমে দফায় দফায় আকাশ বৃষ্টি আর উজানের পানিতে ভবদহ বিলপাড়ের ৮০ গ্রামের প্রায় চার লাখ মানুষ দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ভবদহ স্লুইচ গেটের বিল সংলগ্ন মুক্তেশ্বরী টেকা নদীতে নাব্যতা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন বিলপাড়ের মানুষ। অথচ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। যশোর-খুলনা জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, ডুমুরিয়া এবং ফুলতলা থানার সীমানাবর্তী স্থানে ভবদহের স্লুইচ গেট। যে গেট দিয়েই ভবদহের উত্তরের ২৭টি বিলের পানি বের হয়। কিন্তু ভবদহের স্রোতের মুখে পলি ভরাটসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় ওই অঞ্চলের ৮০টি গ্রাম এখন স্থায়ী জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর এসব সমস্যার জন্য ভুক্তভোগী জনগণ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, আগামী বছর অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে ব্যাহত হবে। দুর্ভোগ লাঘবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির বিকল্প দেখছেন না তিনি। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ভবদহের সমস্যার স্থায়ী কোনো সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এছাড়া মুক্তেশ্বরী টেকা নদীতে আদৌ কোনো স্রোতে না থাকায় সহসা পানি কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না এলাকাবাসী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও মনিরামপুর অংশে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে থাকায় সেখানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। পানি সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আব্দুল হামিদ জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাউবোর সভায় সেচ প্রকল্পে আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এটি পানি নিষ্কাশনে একটি অকার্যকর এবং দিবাস্বপ্ন লুটপাটের অভিযোগ তুলে উপস্থিতিদের চরম আপত্তিতে ভেস্তে যায়। টিআরএম চালু জলাবদ্ধতার সমাধানের একমাত্র পথ বলে মত দেওয়া হয়। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরই চেষ্টা করছেন ভবদহের সমস্যার সমাধানের জন্য। ইতোমধ্যে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করতে চলেছে।