স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শেষ যুদ্ধক্ষেত্র খুলনার শিরোমনিতে নির্মিত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ

40

ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি।।

খুলনা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটর দুরে শিরোমনি , ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ঠিক ওই সময় একটি বৃহৎ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিবাহিনী ভারতীয় সেনা। খুলনার শিরোমনিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে এই সম্মুখ যুদ্ধের কারণে খুলনা শত্রুমুক্ত হয় একদিন পর অর্থাৎ বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। শিরোমনির যুদ্ধকে বলা হয় ‘ব্যাটল অফ শিরোমনি’১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পাকবাহিনী বাধ্য হয়ে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে  খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর খুলনা সদর দপ্তরের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার মুহম্মদ হায়াত খান পাকবাহিনীর একটা বড় ব্রিগেড নিয়ে খুলনার শিরোমনি, আটরা, গিলেতলা, শ্যামগজ্ঞ, তেলিগাতি এলাকার একাধিক স্থানে ক্যাম্প গড়ে তোলেন। এর মধ্যে জনশূন্য শিরোমনি এলাকায় কমান্ডার হায়াত খান সবচেয়ে বড় ক্যাম্প গড়েন হায়াত খান তার সাঁজোয়া গোলন্দাজ ব্রিগেড নিয়ে খুলনা শহরের উত্তর উত্তর-পশ্চিম এলাকা জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তা ছাড়া আটরা থেকে শিরোমনি এলাকার যশোর রোডে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পুতে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেয়। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করেও কোনো সাড়া না পেয়ে এবং তাদের নিরবতা দেখে ভুল ধারণার বশর্বর্তী হয়ে ফুলতলার চৌদ্দ মাইলে অবস্থানরত মিত্রবাহিনীর মেজর মহেন্দ্র সিং মেজর গণির নেতৃত্বে একটা বড় কনভয় ১৪ ডিসেম্বর খুলনার দিকে রওনা করে। মিত্রবাহিনী খুলনার শিরোমনি এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রে নিশানার মধ্যে পৌঁছালে পাকবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।অপরদিকে, মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট ইস্টার্ণ জুটমিল গেট এলাকা দিয়ে ভৈরব নদ পার হয়ে শিরোমনির ঠিক পূর্বপাশে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে পশ্চিম পাশে পাক সেনাদের উদ্দেশ্যে গোলা ছুড়তে থাকেন। ওই সময় মেজর মঞ্জুর তার বাহিনীকে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বুধবার ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে বিভিন্ন দিক থেকে খন্ড খন্ড যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে শিরোমনি অবস্থানে ঘিরে ফেলেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও হায়াত খান তা না মেনে তার বাহিনীকে নিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো দলের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বাধিন সেই ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট এবং চার সহ¯্রাধিক সৈন্য। ওই রাত থেকেই মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে শুরু হয় সর্বাত্মক সম্মুখ সমর। সারারাত ধরে চলা যুদ্ধে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির মুখে এক পর্যায়ে ১৭ ডিসেম্বর ভোরে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বিজয়ী মিত্রবাহিনী- মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শিরোমনি নসু খানের ইটভাটার কাছে পরাজিত পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধটিকে বলা হয় ‘ব্যাটল অফ শিরোমনি’এই যুদ্ধে শিরোমনি বাজার , গিলাতলা সহ আশপাশের এলাকার মধ্যে  ব্যাপক ক্ষতি হয়  প্রতিটি গাছ ভবনে শত শত গুলি শেলের আঘাতের চিহ্ন ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত দেখা গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ওইসব গাছ-পালা ঘরবাড়ি দেখে মানুষ শিরোমনি যুদ্ধের ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারতেন।দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শিরোমনির যুদ্ধ খুবই উল্লেখযোগ্য।  খানজাহান আলী থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার স.রেজওয়ান আলী বলেন, মূলযুদ্ধ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল যেখানে সেখানে স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। স্বাধীনতার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র শিরোমনিতেই একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক এটাই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি বলে তিনি জানান।