দেশের সড়কে বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য নতুন নয়। তবে সেই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আবারও জেগে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি সড়কে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখিয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের এমন কর্মসূচির দিনে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে: ‘গত নভেম্বর মাসে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪০৭ জন। গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২.৬৩টি এবং নিহত হয়েছে ১৩.৭৬ জন।’ জানা যায়, ‘অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৩.১৭শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৪.৮৭ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে ৩৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১১.১৬টি দুর্ঘটনা ঘটে এবং নিহত হয় ১৩.১২ জন। নভেম্বর মাসে ১৫৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৮৪ জন। এই হিসেবে অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বর মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৯.৭২ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১০.১৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩৩৪ জন, অর্থাৎ ৮০.৮৭ শতাংশ।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘ট্রাক ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালানো এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। পথচারী নিহতের মাত্রাও চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনই যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। ফলে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।’ চট্টগ্রামেও শনিবার রেল দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও নিয়ম না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার উর্ধ্বমুখী হলেও অজানা কারণে এটা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্যণীয় নয়। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার ফলে মূলত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। যে কারণে শনিবারের বিক্ষোভে লাল কার্ড দেখিয়ে সড়কে অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরেছে শিক্ষার্থীরা। অবশ্য সরকারের তরফে নিরাপদ সড়কের দাবিকে একটি রাজনৈতিক দলের উস্কানি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এই মন্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য অবশ্য রাজনৈতিক। আমরা সে বিষয়ে মন্তব্য না করলেও সড়কের বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর মাধ্যমে প্রাণহানি শূন্যের কোটায় আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।