খুলনার আলোচিত সেই প্রতারক মনি’র জামিন ফের না মঞ্জুর

1
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার ।।

খুলনার আলোচিত সেই প্রতারক ও সরকারি স্ট্যাম্প জাল জালিয়াতির হোতা ফরিদা ইয়াসমিন মনি (৪২)’র জামিন আবেদন ফের নামঞ্জুর করেছে আদালত। আজ ৫ডিসেম্বর (রবিবার) খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি মনি’র জামিন আবেদন করা হয়। শুণানী শেষে আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলাম জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন। প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধিন করিম নগর মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল ওহাব খাঁনের মেয়ে। সে বসুপাড়া কবরখানা এলাকার টাওয়ার ওয়ালা গলির শহিদুল ইসলামের বাড়ির ৫তলায় ভাড়া থাকেন। ২৪ নভেম্বর রাতে ওই বাড়ি থেকে প্রতারক চক্রের হোতা ফরিদা ইয়াসমিন মনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৬ সদস্যরা। ২৫নভেম্বর সদর থানা পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করলে খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহীদুল ইসলাম আসামি মনিকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এরপর ২৮নভেম্বর আসামি মনি’র আইনজীবীর করা জামিন আদেন শুনানী শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ড.আতিকুস সামাদ জামিন না-মঞ্জুর করেন।

এছাড়াও প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনার দেবেনবাবু রোড এলাকা, ঢাকার রমনা থানাধিন মধুবাগ গলির বাড়ী নং ৪৫৯ (স্টার লজ), ঢাকার মুগদা থানার সবুজবাগ দক্ষিণ মান্ডা, চাঁন মিয়া গলির কাওসার আহম্মেদের ভাড়া বাসাসহ আরও একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত আরও ৪জনসহ ৩/৪জন আসামি রয়েছে।

খুলনার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানকে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে ফাঁসানোর চেষ্টাকারী ফরিদা ইয়াসমিন মনি চক্রের বিরুদ্ধে দুইজন আইনজীবী পৃথকভাবে দু’টি জিডি করেছেন। ওই স্ট্যাম্পে তৈরি অঙ্গিকারনামায় করা ওই দু’জন আইনজীবীর নামের সীল ও স্বাক্ষর জাল বলে তারা এ জিডি করেন (যার নং-১৫০৬ ও ১৫০৭)। জিডি দায়ের করা ওই দু’জন আইনজীবী হলেন, নোটারী পাবলিক ও এপিপি মোঃ আব্দুল মান্নান এবং এড. মোঃ আতাহার হোসেন জোয়ারদার। এ বিষয়টিও তদন্তনাধীন রয়েছে।

বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য সুত্রে দেখা যায়, কু-প্রস্তাব, ভয়ভীতি হুমকি, শারীরিক নির্যাতন, খারাপ নজরে তাকানো আর কখনও টাকা ধার দেয়ার অভিযোগের বাদি হন খুলনার প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি (৪২)। এসকল অভিযোগ তিনি পরিচিত নানা শ্রেণী পেশার মানুষের নামে করেই ব্লাক মেইল করতেন বলে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি জিডি করে (নং-১৫২৫)। ওই জিডিতে তিনি দু’জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা, কুপ্রস্তাব ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ দেন। পরে ওই জিডি’র অভিযোগ দেখিয়ে সেই ব্যক্তিদের ব্লাক মেইল করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তার কথিত ২য় স্বামী নিউটন গাইন ওরফে লিটনসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অপহরনে মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট প্রদানকারী তদন্ত কর্মকর্তা একজন সাবেক সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধেও তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে প্রতারক মনি ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তোলেন। পরে মোটা অংকের টাকা দাবি করে অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। ২০২০ সালের ২৩ ডি‌সেম্বর প্রতারক মনি’র ২য় স্বামী নিউটন গাইন তার উশৃঙ্খল জীবন যাপন ও প্রতারনা বিষয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, নিউটন গাইনকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে ৮/৯টি মিথ্যা মামলা দেয় প্রতারক মনি। এছাড়া তার প্রথম স্বামী খুলনা নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকার হায়দার আলী শেখ। প্রথম স্বামী শেখ হায়দার আলীও গত ১৩ জুন মনি’র বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি জিডি করেছেন (নং-৮৪০)। তাকে তার সাবেক স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন মনি ভয়ভীতি ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রতারক ফরিদা ইয়াসমিন মনি গ্রেফতার হওয়া মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জালিয়াতি করে খুলনার সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানের নামে একটি অঙ্গিকার নামা তৈরি করে এ প্রতারক চক্রটি। ওই অঙ্গিকারনামায় বলা হয়, ফরিদা ইয়াসমিন মনি নামের এক নারীর সন্তান উদ্ধারের কথা বলে সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান ৩লাখ ৭৭হাজার টাকা নিয়েছেন। এ অঙ্গিকারনামাটি ব্যবহার করে ওই চক্রটি সোহাগ দেওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রমান মেলে তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তৈরি করা অঙ্গিকারনামাটি ২০১৮ সালের ৪জানুয়ারির তারিখে দেখানো হলেও সেটি আসলে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের নির্ধারিত দপ্তরে উক্ত স্ট্যাম্প তৈরির আড়াই বছর আগের তারিখ ব্যবহার করে আসামিরা সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ানকে ফাঁসানোর জন্য এই জাল জালিয়াতি করেছেন। সহকারি নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) প্রধান কার্যালয় ও পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের ট্রেজারী শাখার লিখিত তথ্যমতে এ প্রাথমিক সত্যতা বেড়িয়ে আসে। এঘটনায় গত ১৫ নভেম্বর খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করতে কেএমপি’র সদর থানাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ হাতে পেয়ে খুলনা সদর থানায় প্রতারক চক্রের প্রধান ফরিদা ইয়াসমিন মনিসহ ৫জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩/৪জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়। দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৩৮৫, ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় গত ১৯ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ (নং-৩৪)।